বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

অতল জলের আয়না

Price
400 BDT

Published on
September 2015

ISBN
9789849164319

Category


উপন্যাসে বিপ্রদাশ বড়ুয়া সবসময় অন্যদের চেয়ে কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে থাকেন।তাঁর লেখায় একটা নিজস্ব ভঙ্গি থাকে, যা পাঠের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি কিছুটা অস্বস্তিও দিয়ে থাকে। এই অস্বস্তি মূলত বিষয়বস্তুর অস্বস্তি।তাঁর লেখা আমাদের এমনকিছু বিষয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য করে যাতে আমরা ঠিক স্বচ্ছন্দ নয়। কিন্তু এটি একটি আয়নার মতো। যাতে আমরা আমাদের অন্য ছবিটি দেখতে পাই। যা একইসাথে অস্বস্তিকর, কিন্তু সত্য।বিপ্রদাশ বড়ুয়ার ‘অতল জলের আয়না’ উপন্যাসটিও তেমনই একটি উপন্যাস।এই উপন্যাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক মায়ার আবরণ তৈরি করে রাখে আমাদের চারপাশে। বাস্তব এবং পরাবাস্তবতার মিশ্রণে এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনি। উপন্যাস শুরু হয় রোহান নামে একজনের আত্মকথায়।উপন্যাসের শুরুতেই ঘোর তৈরি করা এক ভাষায় আমরা কেন্দ্রীয় চরিত্র রোহান এবং অন্য চরিত্রগুলোর পরিচয় পেতে শুরু করি। রোহানের বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। যদিও তার কোনো স্বীকৃতি তিনি পাননি।রোহানের আপন বলতে কেবল বড় ভাই। বড় ভাই বিয়ে করলে বৌদি চন্দ্রমল্লির সাথে ধীরে ধীরে মায়া এবং স্নেহের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে রোহান। পরবর্তীকালে দুজনের সেই সম্পর্ক  মোহ এবং প্রেমের দিকে এগোতে থাকে।যদিও সেই প্রেম কেবল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আরো কিছু মানুষের প্রেম সেখানে জড়ো হয়। চন্দ্রমল্লির অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বড় ভাইয়ের মৃত্যু হলে আরো কাছাকাছি এসে পড়ে রোহান ও চন্দ্রমল্লি। এর আগে আমরা আবিষ্কার করি অলি, আলা কিংবা আলেয়াকে; যাকে রোহান ভালোবাসত। কিন্তু সেই সম্পর্কও ঠিক স্বাভাবিক প্রেমের সম্পর্ক না। সেই প্রেমেরও কোনো পরিণতির সম্ভাবনা আমরা দেখি না। এক তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে সম্পর্কগুলো এগোতে থাকে। এদিকে বড় হতে থাকে চন্দ্রমল্লির সন্তান টুটুও। অলিকে যখন রোহান ভালোবাসার কথা জানায়, তখন অলি জানায় “টুটু দেখতে রোহানের মতো।” তার এমন উত্তরে ভেতরে ভেঙে পড়ে রোহান। তবে এ কথা কেবল অলি নয়, এলাকার মানুষও বলাবলি করে। অনেকটা পরোক্ষভাবেই রোহানকে ফিরিয়ে দেয় অলি। এর মাঝে ভালো ফল করে কলেজে ভর্তি হয়ে দূরে চলে যায় রোহান। কিন্তু সেখানেও প্রেমের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে না সে। তার সামনে এসে হাজির হয় পা খোঁড়া এবং ক্যান্সার আক্রান্ত মীনাক্ষী। একসময় তারা দুজনও কাছাকাছি আসে। মৃত্যুপথযাত্রী মীনাক্ষীকে রোহান জানায় সে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু ঠিক মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে বেরুতে পারে না সে। সে আসলেই নিশ্চিত না সে মীনাক্ষী ভালোবাসে কিনা। নাকি এ কেবল মৃত্যুপথযাত্রী একটা মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা? তবুও মীনাক্ষী বেঁচে থাকে। শুধু বেঁচেই থাকে না, তার সাথে রোহানের বিয়েও ঠিক। কিন্তু কেন এই বিয়ে? ভালোবেসে, নাকি করুণা? আর তাদের এই বিয়েকে ঘিরে অনেকই তৎপর হয়ে ওঠে; রোহানের ছোট মামা ও পিসি, আলেয়ার বাবা মা, চন্দ্রমল্লির মা। কারণ রোহানের সম্পত্তি। তবে শেষ পর্যন্ত রোহন এবং মীনাক্ষীর বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাকি থাকে কেবল মীনাক্ষীর ক্ষয়ে ক্ষয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। একসময় আর লড়াই করতে পারে না মীনাক্ষী, মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে সে। তিনটি ভালোবাসার সম্পর্কের সমীকরণে দুটিকেই হারিয়ে ফেলে রোহান। এরপর স্বাভাবিকভাবেই তাকে ফিরে আসতে হয় চন্দ্রমল্লির কাছে। যার কাছে তার ভালোবাসার সম্পর্কের পাঠ নেওয়া শুরু হয়েছিল। এভাবেই শেষ হয় এই উপন্যাস। মানুষের সম্পর্কের যে নানা মাত্রিক অবস্থান এবং সেসব সম্পর্ককে ঘিরে তার যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সেই সৌন্দর্যকেই দারুণ নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। যেখানে নৈতিক দায়বদ্ধতার চেয়ে মানুষের আত্মিক ও মানসিক চাওয়াটাই বারবার প্রকট হয়ে ওঠে।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *