বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স
Syed-Jahangir

আত্মপ্রতিকৃতি: স্মৃতির মানচিত্র

Price
475 BDT

Published on
March 2015

ISBN
9789843389220

Category


রেখা-রঙের তীরে, রূপের গভীরে এক অরূপ ছবির রহস্যের কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই অরূপ রহস্যকে সৈয়দ জাহাঙ্গীরের চিত্রকর্মে কতভাবেই-না দেখতে পাওয়া গেছে। নিজেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেখতে চেয়েছেন বলেই হয়তো তাঁর পক্ষে এটি করা সম্ভব হয়েছে। এর সঙ্গে চিত্রকলার যোগ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জীবনেরও যোগ। মহত্তম এক সংযোগ এটি, যা কিনা সবার সাধ্যে কুলোয় না। আবের-সুর-ওয়াজ (আঁবৎং-ংঁৎ-ঙরংব) থেকে ভাই থিওকে লেখা এক চিঠিতে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ একই সঙ্গে শিল্প আর জীবনকে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন। সেই ভালোবাসাটাই অন্যভাবে প্রকাশ করতে চেয়েছেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁর স্মৃতিকথা ‘আত্মপ্রতিকৃতি : স্মৃতির মানচিত্র’ গ্রন্থটিতে।

এই স্মৃতিকথায় প্রথমেই যেটি নজরে পড়ে, তা হচ্ছে লেখক অত্যন্ত যতœ করে নিজের পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে তাঁর পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। সৈয়দ জাহাঙ্গীরের পিতামহ মৌলানা সৈয়দ আলম শাহ অবিভক্ত ভারতের (বর্তমানে পাকিস্তানের) উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বাফাহাজারা থেকে প্রথমে কলকাতা, পরে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার অন্তর্গত তেঁতুলিয়া গ্রামে আসেন। এখানেই জন্ম নেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই বড় ভাই সিকান্দার আবু জাফর, যিনি কবি-সম্পাদক, গীতিকার-নাট্যকার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত; মেজো ভাই সৈয়দ কোহিনূর জাফর যাঁর সন্তান-সন্ততিকে নিজের সন্তান-সন্ততির মতো করেই মানুষ করেছেন নিঃসন্তান জাহাঙ্গীর-আনিস দম্পতি। আর সবার ছোট শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। এই স্মৃতিকথায় জীবনে ঘটে-যাওয়া ঘটনার বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি ছবি-আঁকার বিভিন্ন ব্যাপার নিয়েও তিনি নানা মন্তব্য করেছেন, যেগুলো খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। ‘ছবির ভুবনে’ অধ্যায়ের এক জায়গায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেছেন : ‘আমি একসময় পুরোপুরি বিমূর্ত ধারায় কাজ করতাম, তখন আনন্দের সঙ্গেই করতাম। আমাদের দেশে খুব কমসংখ্যক দর্শকই বিমূর্ত ধারার ছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। আমি দেখেছি আমার বিমূর্ত ছবি সেভাবে বিপুলসংখ্যক দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটা কি কেবল আমার বেলায়? বিদেশের গ্যালারিতে দেখেছি দর্শকেরা বিমূর্ত ছবি পছন্দ করছেন, বলছেন এটা সুন্দর ছবি। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন এটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এই ছবি আমি বুঝছি না। তার মানে মানুষ ছবি দেখে কেবল আনন্দ নয়, ছবি বুঝতেও চায়। দর্শকের সঙ্গে আমার ছবি পুরোপুরি সংযোগ স্থাপনে সমর্থ হচ্ছে না। এটা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলো। পরে তাই ফিগারেটিভ বা আধা বিমূর্ত কাজের ধারায় ফিরে এলাম। এখন দেখছি আমার ছবি শতভাগ দর্শকের কাছে পছন্দনীয় না হলেও শতকরা নব্বই জন দর্শক আমার ছবি পছন্দ করছেন।’ এই মতের সঙ্গে অনেকেই হয়তো একমত হবেন না। বরং প্রশ্ন উঠবে, দর্শকের ছবি বুঝতে পারা, তাদের ছবি পছন্দ করাটাই কি একটি শিল্পকর্মের সবচেয়ে বড় সার্থকতা? ১৯৩৪ সালে কলম্বোয় তাঁর ছবি প্রদর্শনীর প্রাক্কালে এক বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘আপনারা জিজ্ঞাসা করিতে পারেন এই ছবিগুলির অর্থ কি? আমি বলি, ইহাদের কোনও অর্থ নাই। প্রাচীন কাব্য ও সাহিত্যের অর্থ আছে, কিন্তু… শিল্পকলার কোনও অর্থ নাই। এই কথা স্মরণ রাখিয়া আপনারা এই চিত্রগুলির মর্ম উপলব্ধির চেষ্টা করিবেন।’

ছবি-আঁকার পাশাপাশি শিল্পীর সামাজিক দায়-দায়িত্বের কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন : ‘আমরা শিল্পীরা একটা-দুটো ছবি এঁকেই আমাদের মানবিক দায়িত্ব এবং সামাজিক কর্তব্য পালন করার মানসিকতা লালন করি। কিন্তু অনেক সময় শারীরিক শ্রমদানও যে অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে সেটা আমাদের মাথায় আসে না।’ উদাহরণ দিতে গিয়ে সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন। সেই সময় এদেশের শিল্পীদের মধ্যে সরাসরি ত্রাণকাজে তিনি ও জয়নুল আবেদিনই শুধু অংশ নিয়েছিলেন। এসব ঘটনা যে একজন শিল্পীকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের শিল্পীরা এখনো সেই প্রবণতা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। খুব কমজনকেই দেশের কোনো সংকটকালে সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। কিন্তু শিল্পীরও যে একটি সামাজিক দায় আছে সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *