আমার সিনেমার জীবন
‘আমার সিনেমা জীবন।’ বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত শাহজাহান চৌধুরী রচিত চলচ্চিত্রবিষয়ক স্মৃতিকথামূলক একটি গ্রন্থ। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বইটি শুরু হয়েছে চিত্রনাট্য রচনার ভঙ্গিতে। এটি মূলত ১৯৬৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রশিল্পের সময়, বিভিন্ন ঘটনাসহ শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে নানা মানুষের সান্নিধ্য নিয়ে রচিত। বইটি পড়লে আমরা তাঁর জীবনে সিনেমাকে ঘিরে জীবনযাপনসহ নানা ঘটনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কিছু জানতে পারি।
শাহজাহান চৌধুরীর একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাহিত্যিক ও সম্পাদক। ছায়াছবি, সাহিত্য ও সম্পাদনা এর প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তিনি পালন করেছেন একাধিক ভূমিকা। চিত্রনির্মাণের নানা পর্যায়ে তিনি হাতে-কলমে কাজ করেছেন, চিত্রনাট্য রচনা করেছেন, প্রযোজনা করেছেন, পরিচালনা করেছেন। তিনি রচনা করেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা ও গান, অনুবাদ করেছেন গদ্য ও পদ্য। তিনি সম্পাদনা করেছেন বিনোদনমূলক পত্রিকা এবং নিজের রচনা সম্পর্কে বিভিন্ন সাহিত্যিকের কথা, অন্যদিকে গ্রহণ করেছেন বহু সুপরিচিত ব্যক্তির অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকার। অত্যন্ত সামাজিক মানুষ তিনি সমাজের নানা পর্যায়ের, নানা পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, নিজে অতি সৌজন্যপরায়ণ। চলচ্চিত্রের প্রতি আকর্ষণ তাঁর আবাল্য। সেই টানে একদিন বাস্তুভূমি চট্টগ্রাম ছেড়ে অজানা শহর ঢাকায় পাড়ি দেন তিনি ষাটের দশকের গোড়ায়। তখন তিনি সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন। সেই অনিশ্চিত যাত্রার কথা দিয়ে এই বইটির শুরু। তারপর কীভাবে তিনি খ্যাত-অখ্যাত নানা মানুষের সঙ্গে পরিচিত হলেন, ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠালাভ করলেন চলচ্চিত্রের জগতে, বিয়ে করলেন, সন্তানাদি লালন করলেন এসব কথা কোথাও সংক্ষেপে, কোথাও বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায়টি চিত্তাকর্ষক অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে দিনাতিপাত, হানাদার বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের মুখোমুখি হওয়া, শেষদিকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া, স্বাধীনতা লাভের উল্লাস, স্বস্থানে ফিরে আসা, নতুন আশা-উদ্দীপনা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে কাজ শুরু করা সবই তাতে বর্ণিত। অনেক গুণী মানুষের কথা আছে প্রসঙ্গক্রমে, যেমন আছে নিতান্ত সাধারণ মানুষের কথা। এই বইতে অনেক নায়ক-নায়িকা, শিল্পী-কলাকুশলীর নাম প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে তাঁর জীবনের অনেক কিছু। জানা যায়, এই রচনা লিখতে প্রায় দশ বছর সময় লেগেছে লেখকের।
মূলত লেখকের সংগ্রামমুখর ও সৃষ্টিশীল জীবনের কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে এই বইতে। আমাদের চলচ্চিত্রজগতের কয়েক দশকের অগ্রযাত্রার খবরাখবর আমরা এতে পাই। তা একইসঙ্গে কৌতূহলোদ্দীপক এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।