আসা যাওয়ার পথের ধারে
বাংলা গানের এক হাজার একশ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে যে কজন মানুষ এই ইতিহাসের অগ্রগতিকে সম্ভব করে তুলেছেন আবদুল আহাদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’ এই লেখকেরই আত্মজীবনী।
বাংলা নাগরিক গান বিকাশ লাভ করেছে হিন্দুস্তানি রাগসংগীতের পটভূমিতেই। রবীন্দ্রনাথ এ সত্যটি স্বীকার করে নিয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, বাংলা নাগরিক গানকে যদি সংগীতের দিক থেকে বাঙালিত্ব অর্জন করতে হয়, তাহলে তাকে হিন্দুস্তানি রাগসংগীতের দিক থেকে উচ্চারণ-পুনরুচ্চারণের পথ ত্যাগ করে, সৃজনশীলভাবে রাগসংগীতের বাঁধা পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। লেখক এ কাজটি চমৎকারভাবে জানতেন এবং তাঁর সংগীত সৃজনে যথার্থ সার্থকতা দেখিয়েছেন। বইটির অন্যতম গুরুত্ববহ দিক এটি। আবার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হওয়াতে লেখকের গোটা জীবন স্থান পেয়েছে এখানে। ছেলেবেলা থেকে শুরু করে শেষ জীবন অবধি প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মিলিয়েছেন তিনি। তবে পাঠকের আরেক প্রাপ্তি এ বইয়ে ব্যবহৃত কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র যা সংযুক্ত হয়েছে বইয়ের শেষে। এখানে লেখকসহ বিভিন্ন পুরোধা শিল্পীর পুরোনো কিছু ছবিও সংকলিত হয়েছে। আধুনিক বাংলা গান ও তার ক্রমবিকাশের একটি ঐতিহাসিক পাঠ পেশ হয় এ গ্রন্থে। ২০১৪ সালে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে পুনরায় প্রকাশিত হয় বইটি।
আবদুল আহাদ বাংলাদেশের আধুনিক ও দেশাত্মবোধক সংগীতপ্রবাহের উদ্গাতা। এ দুটি রীতিকে পল্লবিত করে তোলার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান তাঁর। এদেশে রবীন্দ্রসংগীতচর্চার তিনি পুরোধা ব্যক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় শান্তিনিকেতনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, শান্তিদেব ঘোষ ও পঙ্কজকুমার মল্লিকের মতো শিল্পীরও প্রশিক্ষক হিসেবে কিংবদন্তির খ্যাতি নিয়ে তিনি কলকাতা থেকে ঢাকা এসেছিলেন। এখানে রবীন্দ্রসংগীতের প্রসারের ব্যাপারে তাঁর যাবতীয় উদ্যোগ সফল হয়ে উঠেছিল। নজরুলসংগীতের ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহ ছিল গভীর। ঢাকায় চলচ্চিত্র সংগীত পরিচালনায়ও তিনি পথিকৃতের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। শিল্পীর এ সমস্ত অভিজ্ঞতাই ব্যপৃত হয়েছে এ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে।