বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

আয়না ভাঙার পর

Price
320 BDT

Published on
2023

ISBN
978-984-97198-1-6

Category


‘আয়না’ নিয়ে রহস্য, রূপকথা বা সংস্কারের কি আর শেষ আছে! গ্রীসের প্রাচীন গাঁথায় বলা আছে, সেই সময় ডাইনিরা তাদের দৈবাদেশ ও বাণীগুলো লিখে রাখতো গোপন সব আয়নার মাধ্যমে। প্রাচীন রোমেও ধর্মগুরুরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বর্ণনা করার জন্যে আয়না ব্যবহার করতেন। প্রাচীন মিশরীয়রা অন্য ভুবনের সঙ্গে সংযোগ সাধনার ক্ষেত্রে আয়নার উল্টো পিঠে ব্যবহার করতো মিহি তাম্রচূর্ণ । কারণ তাদের ধারণা ছিল, সৌন্দর্য, প্রেম, কাম, সমৃদ্ধি ও জাদুর দেবী ‘হাথোর’-এর বিশেষ সম্পর্ক ছিল উজ্জ্বল ধাতু এই তামার সাথে। প্রাচীন চীনে চাঁদের স্বর্গীয় শক্তি ধরে রাখার জন্যে ব্যবহার করা হতো বিশাল জাদুর আয়না। সেই আয়নার দিকে তাকানো মানুষের মুখে তাকিয়ে বলে দেওয়া যেতো তাদের গোপন চিন্তা-ভাবনা ও মনের আসল খবর। প্রাচীন অ্যাজটেকদের বিশ^াস ছিল আরও অন্যরকম। তাদের রাত্রি, সময় ও বংশ পরিক্রমায় পাওয়া স্মৃতির দেবতা আয়নাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে স্বর্গলোক থেকে নেমে আসতেন এই মাটির পৃথিবীতে। এমনিভাবে, সুদূর প্রাচীন যুগ হতে আজ পর্যন্ত এমন আশ্চর্য সব লোকবিশ^াসের কাছে হার মেনেছে মানুষেরই যুক্তি। এমনকি হারিয়ে যাওয়া বস্তু কিংবা মানুষের সন্ধানও নিখুঁত বলে দিতে পারেÑ এমন জাদুর আয়নাও না কি খুঁজে পাওয়া যাবে পৃথিবীতে।
কাল পরম্পরায় আয়না যেমন করে সৌভাগ্য ও বিশ^াসের প্রতীক হয়ে উঠেছে তেমনি কখনওবা আবার বয়ে আনতে পারে চির দুর্ভাগ্যেরও পরিণতি। আয়না ভাঙার পর মানুষের বিশ^াসে তাই তো তা হয়ে ওঠে ভাগ্যের অনিবার্য এক নিয়ন্তা। কিন্তু, আয়না ভেঙে গেলে সত্যিই কি কিছু হয়? মানুষের ভেতরকার বিশ^াসের প্রতীক রূপ এখানে ‘আয়না’। তাই ‘আয়না’ ভাঙা মানে স্বার্থ নিয়ে টানাটানি, মান-অভিমান, দ্বেষ-বিদ্বেষ, ভুল বোঝাবুঝি এবং চারপাশের চেনা জীবনের টুকরো-ছিন্ন-মমতাহীন কিছু পারিপাশির্^ক দৃশ্যের সূচনা মাত্র। মানুষের অখ- বিশ^াস কীভাবে মুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায় আয়না কেবল সে কথাই বলে। আসলে মানুষের সামগ্রিক জীবন ও অবধারিত পারিবারিক টানাপড়েনের সত্যিকার যাপনচিত্র এই ‘আয়না’।
আয়না ভাঙার পর তাই যে ভাঙা টুকরোগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সেগুলোও এক একটা মুক্ত স্বাধীন আয়না। ওতেও জীবনের পূর্ণ প্রতিবিম্ব দেখা যেতে পারে যদি কেউ সঠিকভাবে দেখতে চায়। কে কীভাবে দেখবে সেটাই আসল, সেখানেই আপেক্ষিকতা। ঠিক তেমনি জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলোতে যে সত্য, অর্ধসত্য কিংবা অস্বচ্ছ ধূসর কাহিনী ভেসে ওঠে সেটাকে পূর্ণ জীবন মনে না করাই শ্রেয়। সবগুলো ভাঙা খ- একসাথে জড়ো করে জোড়া দিলে চিড় ধরা আয়নাই মিলতে পারে। সেগুলো পূর্ণাঙ্গ জীবনের মাঝে সন্দেহ, অবিশ^াস আর দূরত্ব ছাড়া আর কিছুই তৈরি করে না। তাই আয়না ভাঙার পর খ-গুলোকে জোড়া দিতে হবে সুনিপুণ কৌশলে, সতর্ক সাবধানেÑ যেন কখনই তা সত্যিকার মহৎ জীবনের চেয়ে বড় ও শক্তিমান হয়ে উঠতে না পারে।
‘আয়না ভাঙার পর’ আমার ষষ্ঠ গল্পবইÑ যেখানে উঠে এসেছে মানুষের সেই বিশ^াসেরই গল্প। তাদের জীবনের সমস্ত বিশ^াস-অবিশ^াস-অর্ধ বিশ^াস সব অখ- থাকুক অটুট এক আয়নারই মতোÑ হোক সে জাদুর বা বাস্তবের, রহস্য কিংবা কল্পনার।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *