
একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ
শহুরে রোমান্টিক কবি শহীদ কাদরী। তাঁর কবিতায় নাগরিক জীবন পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে বিচিত্র ব্যঞ্জনায়। শহুরে শব্দের পর শব্দ গেঁথে গড়ে তুলেছেন কবিতার দালান। তবে এটাই তাঁর কাব্যসাধনার শেষ কথা ছিল না। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল স্বদেশচেতনার তীব্র স্রোত, যা আমাদের ভাবনার দিগন্তকে প্রসারিত করে। স্বদেশচেতনা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বোধে যে-চেতনা সঞ্চার করে, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ও আছে একটি অঞ্চলের মানুষের কষ্ট, বেদনা ও নৈরাশ্য, আছে স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা। শহীদ কাদরী পরম মমতায় সেই স্বপ্ন- আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিয়েছেন নানা ভাবে।
কবি জন্মভূমিকে তুলনা করেছেন প্রিয়তমার সঙ্গে। আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি তেমন ব্যবস্থা করবেন যেন সেনাবাহিনী গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে মার্চপাস্ট করে চলে যায় এবং স্যালুট করে কেবল সেই প্রিয়তমাকে। ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’ কবিতায় এমনই চিত্রকল্প রচনা করেছেন তিনি। ‘উত্তরাধিকার’ কবিতায় শোকগ্রস্ত কবি বেদনার্ত উচ্চারণে বলেছেন পরাধীনতার যন্ত্রণার কথা। তবে আশা হারাননি। ‘বৃষ্টি, বৃষ্টি’ কবিতায় তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বিপ্লবের প্রতীক জলে ধুয়ে-মুছে যাবে সমাজের যত ক্লেদ, গ্লানি, বিপন্নতা। একাত্তরের খা-বদাহনের তিনি প্রত্যক্ষদর্শী। সে-সময়ের অবর্ণনীয় যন্ত্রণা-কষ্ট উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়, একই সঙ্গে দ্রোহও। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চলে গিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে থেকেও মন পড়ে ছিল বাংলাদেশে। তাই তাঁর কবিতায় বারে বারে ফিরে ফিরে এসেছে এদেশের কথা, মানুষের কথা, মাটির কথা।
‘একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ’ গ্রন্থটির সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং হাসান ফেরদৌস। এ গ্রন্থে শহীদ কাদরীর স্বদেশচেতনামূলক কবিতা সংকলিত হয়েছে। এসব কবিতা পাঠে এ অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও সংগ্রামী চেতনার দীপ্ত চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।