বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স
Khulna-71

খুলনা একাত্তর : আমার মুক্তিযুদ্ধ

Price
250 BDT

Published on
February 2014

ISBN
9789849049678

Category


দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খুলনা একাত্তর : আমার মুক্তিযুদ্ধ’, প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪-এ। এ বই চেতনার সূক্ষ্ম তারে অনুরণন তোলে, যা সঞ্চারিত হয় সকল পরিবাহিকায়। হৃদয়ে জাগায় আকুতি, পাওয়া এবং হারানো, দুটোকেই যা তুমুল বৈভবে ও অন্তহীন আক্ষেপে একই বিন্দুতে মেলায়। অথচ কোথাও এ উচ্চকণ্ঠ নয়। রুচির সংযমে এতটুকু চির খায় না। যেটুকু জানার, তাতে কিছু বাদও যায় না। যদিও যা ঘটে, তা সবই আমাদের উত্তেজনাকে শিখরস্পর্শী করে ভয় ও জয়, দুই-ই হাত ধরাধরি করে চলে। এবং তারা প্রত্যক্ষ বাস্তব। ইতিহাসের এক সৃষ্টি-মুহূর্তের আনন্দ-বেদনায় মাখা। ভাষা লাগামছাড়া হয়ে পড়লে তা অস্বাভাবিক হতো না। কিন্তু তা হয়নি। লেখায় রাশ শক্ত হাতে, কিন্তু পরম মমতায় আগাগোড়া ধরা।

লেখার সময় একুশ শতকের প্রথম কবছর একটু-একটু করে। তাও একাত্তর থেকে তিন দশক পেরিয়ে। দীপা লিখেছেন পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদ ডিঙিয়ে কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় বন্দী শিবির থেকে পালিয়ে সহায়-সম্বলহীন অনিশ্চয়তায় আর দুর্গতিতে ভরা উদ্বাস্তু জীবনের কথা নিয়ে। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধে গান গেয়ে তিনিও তাঁর ‘যেটুকু সাধ্য’ ঢেলে দিয়েছেন। তবে এখানে বর্ণনায় নিজের অবদান তাঁর প্রাধান্য পায়নি। কী অবস্থার ভেতর দিয়ে মার্চ-এপ্রিল থেকে ওই সময়টা তিনি পার করেছেন, সেইটিই বলার মুখ্য বিষয়।

ঊনসত্তরের গণরোষে আইয়ুব খানের পদত্যাগ, অনন্যোপায় নতুন সমরশাসক ইয়াহিয়া খানের সব প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে বাঙালি জাতিসত্তার বিস্ফোরণ, সত্তরের নির্বাচন, তাতে অখ- পাকিস্তানেই বাঙালির নিরঙ্কুশ প্রাধান্য, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর তাকে বানচাল করার চক্রান্ত, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অদম্য ঐতিহাসিক ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের স্বাধীনতার সংগ্রাম’, আর তাঁরই নির্দেশে বাঙালির সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের শুরু এইখানেই এই বইয়ে পাঠপর্বের যবনিকা উন্মোচন।

দীপা তাঁর কথামালার গোড়ার মুখটুকু শুধু ধরিয়ে দিয়েছেন। বাকিটা ছড়িয়ে গেছে তাঁরই অভিজ্ঞতার বর্ণনায়। তা শুধু তাঁর ‘মুক্তিযুদ্ধ’ থাকেনি। আরো কতজনের কথা কতভাবে ওই মোহনায় এসে মেশে। সুখ না পেলেও তাদের মনে সান্ত¡নার প্রলেপ একটু পড়ে। এখানে একাত্তরের এপ্রিল আসে মার্চের ঘাত-প্রতিঘাতের ধারাবাহিকতায়। গণ-অসহযোগ বিকল করে ফেলে পাকিস্তানি শাসনযন্ত্র। শক্তিমদগর্বিত শাসকচক্র মনে করে, ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করেই তারা একে শায়েস্তা করে ফেলবে। পঁচিশে মার্চ রাতে চলে আন্দোলনমুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। বাংলার মানুষ নতি স্বীকার করে না। পাকিস্তানি শাসনকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করে। বাড়িতে বাড়িতে উড়তে থাকে তৎক্ষণিকভাবে রচিত ও গণ-অনুমোদনের উন্মাদনায় স্বীকৃত এই বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা। ‘দানবের সাথে সংগ্রামের তরে’ প্রস্তুতি চলে ঘরে ঘরে। একে নির্মূল করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পরিকল্পিত নীল-নকশা অনুযায়ী উৎকট সাম্প্রদায়িক রোষে বিভিন্ন বড় শহরে সংখ্যালঘু নেতৃস্থানীয় যাঁরা তাঁদের ঘর থেকে টেনে বের করে এনে রাতের বেলাতেই সবাইকে দেখিয়ে হত্যা করা শুরু করে। খুলনায় ঘটে এটা ১ এপ্রিল। ইসলামি রাষ্ট্রে শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বলেই সেখানে প্রাণ হারালেন সমাজে শ্রদ্ধেয় ছয়জন বড়মাপের মানুষ। এপ্রিলের নিষ্ঠুরতার আর এক রূপ দেখলেন দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সে সময়কার সর্বগ্রাসী নিষ্ঠুরতার পরিম-লে শুধু দীপাদের পরিবার কেন, তাঁদের মতো আর কেউই নিরাপদ থাকেন না। তাঁদের মতো লাখ লাখ মানুষ, শেষ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি, দেশত্যাগে বাধ্য হন। দেশে যাঁরা থেকে যান, তাঁদেরও সিংহভাগ ধর্ম যাই হোক না কেন বাঙালি-চেতনা মন থেকে মুছে ফেলতে পারেন না। তা চানও না। অনেক ঝুঁকি মাথায় নিয়েও তাঁরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, যা তখন ঘোষিত বাস্তব, মনের গভীরে লালন করে চলেন। জঙ্গি পাকিস্তানিদেরও হিসাবে ভুল ছিল। বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হলেও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রবাসেই তার বৈধ ক্রিয়াকর্ম বজায় রাখে। অবরুদ্ধ দেশ উদ্ধারে মুক্তিযুদ্ধ তার নেতৃত্বে ভিন্ন মাত্রা পায়। এই পটভূমিতে দীপা তাঁর অনিশ্চিত জীবনযাত্রার কথা লেখেন বইটিতে। একদিক থেকে এটা তাঁর একার কথা। কিন্তু এই একার কথাই সমজাতীয় বাস্তবের অভিঘাতে সবার কথা হয়ে যায়।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *