বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

টান

Price
175 BDT

Published on
February 2013

ISBN
9789843358080

Category


বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে এক অনবদ্য নাম হাসান আজিজুল হক। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলছে তাঁর সাহিত্যচর্চা। ছোটগল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পদচারণা। যে-কোনো ঘটনা সহজ-সরল ভাষায় বর্ণনায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিষয়াবলি নির্বাচন ও চরিত্র নির্মাণে তিনি বরাবরই সিদ্ধহস্ত। গুণী এ লেখকের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘টান’। নিজের ফেলে আসা জীবন আর জনপদের কথা অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এ-গ্রন্থে। শব্দের পর শব্দ গেঁথে পাঠককে টেনে নিয়ে গেছেন স্মৃতির গভীরে। পাঠকও নিমগ্নচিত্তে বিভোর হয়েছেন স্মৃতিকাতরতায়।

চারটি পরিচ্ছদে আবদ্ধ টানের স্মৃতিকথন- ‘টান’, ‘দূরবাসী’, ‘আবার যদি ইচ্ছে করো’ ও ‘ভোরবেলাকার চোখ’।
প্রথম পরিচ্ছদে নিজের জন্মস্থানের বর্ণনা দিয়েছেন স্মৃতি-বিস্মৃতির দোলাচালে। হাসান আজিজুল হকের জন্ম পশ্চিমবাংলার রাঢ় এলাকায় এক সাধারণ গ্রামে। একসময় পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। কিন্তু ছেলেবেলাকার মাটির টান তাকে ছাড়েনি। অনেক পরে তিনি একবার দেখতে যান তাঁর শৈশবের ফেলে-আসা গ্রামে। সে-সময় অদ্ভুত এক বোধ কাজ করতে থাকে তাঁর ভেতর। যে-পথেই তিনি যাচ্ছিলেন মনে হচ্ছিল- এদিক দিয়ে কোনোদিন আসেননি। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে তার চোখ দেখছিল এক সবুজ বাংলাকে। মনে খেলে যাচ্ছিল নতুন কোনো কিছু দেখার বোধ। নিটোল বর্ণনায় তিনি তুলে এনেছেন স্মৃতির কুঠুরিতে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাংশ।
একটি ঘটনা শিক্ষকের প্রতি লেখকের শ্রদ্ধার গভীরতা প্রমাণ করে। তাঁর পাঠশালার এবং স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে শতবর্ষ ছুঁইছুঁই একমাত্র জীবিত মাস্টারমশাই শিবরাম চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার ঠিকানা না পেয়ে হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এই ভ্রমণের সবটাই প্রায় মাটি। ঠিক তখনই খোঁজ পান সেই শিক্ষকের। মাস্টারমশাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে চিনতে পারেননি। সেই খাটো ধুতি আর মোটা পাঞ্জাবি পরনে। শীর্ণ মানুষটি- একেবারে দম্ভহীন। সামনে দাঁড়াতেই লেখককে তিনি জড়িয়ে ধরেন। লেখক জিজ্ঞেস করেন, ‘চিনতে পারছেন তো?’ উত্তরে বলেন, ‘তোমাকে চিনব না! তুমি আমার গর্ব, তুমি আমার দেশের গর্ব।’ কণ্ঠস্বরে আর বলার ভঙ্গিতেই লেখক খুঁজে পান ছোট্টবেলার সেই মাস্টারমশাইকে।
সৃষ্টিশীল মানুষ তাঁর ভেতরকার জগৎ এবং পরিদৃশ্যমান জগতের সমন্বয়, অনুরাগ, অনুভূতি, চেতনা আর অপ্রকাশের ভার মুক্তির জন্যই লেখেন। সে-অভিজ্ঞতা যত তীব্র আর উদ্বেগজনকই হোক না কেন। তাই তো অন্য অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন ডা. দেবী শেঠির কাছে চিকিৎসার কথা, অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে বুড়ো মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা। মায়ের স্নেহের কথা- ‘মা জড়িত গলায় বলে যান, কেমন আছিস বাবা? ভালো ছিলি? এতদিন আসিসনি কেন? এলি তাহলে?’ রাতে মায়ের কাছে শুয়ে মনে পড়ে ছোট্টবেলায় মায়ের বুক ঘেঁষে শুয়ে রূপকথা শোনার কথা। পরিশেষে এ-কথা বলা যায়, লেখক শেকড়ের টানে বারংবারই ফিরে দেখেছেন জন্মভূমির মানুষজন আর পরিবেশকে। ফেলে আসা দিনগুলো নতুন এক আবেগ নিয়ে, কষ্ট নিয়ে উন্মোচিত হয়েছে তাঁর চোখে। কষ্ট আর বেদনার এই তাপকে তিনি সঞ্চারিত করেছেন পাঠকের হৃদয়মনে। বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রত্যক্ষণে ও বিবরণে তাঁর কথনশৈলী এক নবরূপ পেয়েছে ‘টান’-এ। গ্রন্থটি যে-কোনো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *