নির্বাচিত জীবনানন্দ দাস: মূলানুগ পাঠ
নির্বাচিত জীবনানন্দ দাশ: মূলানুগ পাঠ। রয়েল সাইজে চারশো আশি পৃষ্ঠার এই বইটি রচনা করেছেন ভূমেন্দ্র গুহ। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী রফিকুন নবী।
বইটি প্রকৃত প্রস্তাবে জীবনানন্দ দাশের রচনার মূলানুগ পাঠের ভূমিকা। এই ভূমিকায় তিনি ভারতবর্ষের বিগত কয়েক শতাব্দীর রাজনীতি, সমাজ বিন্যাস ও ইংরেজের আগমনের ফলে শিক্ষাবিস্তার, বিগত শতাব্দীর কুড়ি, তিরিশ ও চল্লিশের দশকের রাজনৈতিক আবহ বিশ্লেষণ করেছেন। জীবনানন্দের জন্ম, কৈশোর ও যৌবনের মানস গঠনের পর্বও উঠে এসেছে এই ভূমিকায়। এই দীর্ঘ ভূমিকাটি পাঠ করে খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় জীবনানন্দ বাংলা সাহিত্যে শুধু প্রণম্য নয়, তিনিই আধুনিকতার পথযাত্রায় উদ্দীপক, একক ও নিঃসঙ্গ এক নাবিক।
ভূমেন্দ্র গুহ পাঁচ দশক ধরে জীবনানন্দের মূল পাণ্ডুলিপি থেকে পাঠ উদ্ধারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। এই দীর্ঘ ভূমিকাটি পাঠ করলে খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায় জীবনানন্দ বাংলা সাহিত্যে শুধু প্রণম্য কবিই নন, তিনিই আধুনিকতার পথিকৃৎ, একক, নির্জন ও নিঃসঙ্গ এক কবি, যাঁর সমাচ্ছন্ন প্রভাব বাংলা কবিতাকে উত্তরণ ও সিদ্ধির পথ দেখিয়েছে।
এই জাতীয় সারগর্ভ বিপুল ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে আর নেই বললেই চলে; এবং বইটিতে জীবনানন্দ দাশ এবং অন্যত্র হতে আহরিত কবিতা ও গদ্যে অসংখ্য উদ্ধৃতি থাকলেও ভূমেন্দ্র গুহ যে-সব কথা লিখেছেন ও প্রসঙ্গ এনেছেন, আমাদের ভাষায় তা সাধারণত ঘটে না।
বলতে গেলে সকল প্রসঙ্গই এসেছে- পুরুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা, বেদ উপনিষদ থেকে আধুনিকতা, বৌদ্ধ দর্শনের কেন্দ্রীয় প্রত্যয়, মার্কসবাদ, বিটি রনদিভে, ভবানী সেন, সোমনাথ লাহিড়ি, কলকাতা শহর, শার্ল বোদলেয়ার, টিএস এলিয়ট, খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্ব, গার্গী, যাজ্ঞবল্ক, সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র, স্বামী বিবেকানন্দ, ফরাসি বিপ্লব, আইনস্টাইন, ইমানুয়েল কান্ট, ডারউইন, অগাস্টিন, পাউন্ড, জেমস জয়েস, কপিল, সাংখ্যকারিকা, চার্বাক, উইলিয়ম জেমস, শেলিং, এমার্সন, থরো, স্পিনোজা, শপেনহাউয়ার, হার্টমান, গিয়ম এপলোনেয়ার, ভ্যালেরি, উইলিয়ামস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অক্তাভিও পাজ প্রমুখ। আরো আছে উপমহাদেশের প্রাচীন কালে চন্দ্র ও সূর্যের গতি পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দীর্ঘ আলোচনা, রাশি-বিষয়ক বক্তব্য, এসব নিয়ে ঋষি-কবিদের ঝগড়া-ঝাঁটি, শত্রুতা, দ্বেষ-বিদ্বেষ। পাশ্চাত্যের গণিত-নির্ভর দর্শন, ভৌত-বিজ্ঞান ও প্রকৃতি-বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছে বইটি থেকে। বলা যায় এটি চারশো আশি পৃষ্ঠা জুড়ে সম্পাদকের একটি গবেষণা সন্দর্ভ। হাজার বছর ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কবি-সাহিত্যিকসহ জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পের সকল শাখার বাহকরা যা কিছু ভেবেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই বইটাতে পাওয়া যায়।