ফাগুনের অগ্নিকণা
কল্যাণী রায় চৌধুরী বা মমতাজ বেগম – একই ব্যক্তি।
কেমন করে সম্ভব? ভাষা আন্দোলনের মহাসড়কে উঠে পিছনে তাকালেই মমতাজ ও কল্যাণীকে একটি সূত্রে আবিষ্কার করা যায়। কলকতার রায় বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায়ের কন্যা কল্যাণী পূর্ব পাকিস্তানের নারায়নগনজের মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের মহাস্রোতের সঙ্গে যুক্ত হলেন,স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে মিছিল করলেন, অপরাধে পাকিস্তানের জেলে গেলেন, স্বামী মান্নাফ ও পাঁচ বছরের একমাত্র কন্যা খুকুকে সময়ের হাতে সমর্পণ করে জেলে দেড় বছর কাটিয়ে ফিরলেন শূন্য হাতে, পিছনে রোদন উঠলো বাংলা ভাষার!
নুরুল আমীনের মূখ্যমন্ত্রীত্বের সময়ে বাংলার মাটি বাঙালির রক্তে রঙ্গিন হয়েছিল, পিছনে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের আর এক রক্তখেকো চীফ সেক্রেটারী আজিজ আহমদ।
মমতাজ বেগম মিনুকে গ্রেফতার করে কোর্টে নিয়ে এলে মর্গান স্কুলের ছাত্রীরা, নারায়নগঞ্জের সংস্কৃতির কর্মী, শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক আর সাধারন জনতা প্রতিবাদে ফেটে পরেছিলো। গড়ে তুলেছিল ইস্পত দৃঢ় একতার দেয়াল। কিন্ত ঢাকা থেকে ইপিআর পাঠিয়ে জনতাকে নির্মম লাঠিপেটা করে রাতের অন্ধকারে ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে আসে নূরুল আমীন ও আজিজ আহমদ গং। সেদিন, ভাষা আন্দোলনের একজন কল্যাণী রায় চৌধুরী বা মমতাজ বেগম একাই প্রতিপক্ষ প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন গোটা পাকিস্তান প্রশাসন ও উর্দু ভাষার। ইতিহাস খুঁড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনের মহিয়সী মমতাজ বেগমকে তুলে আনলেন ‘ফাগুনের অগ্নিকণা’ উপন্যাসের আখ্যানে কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার। ধারণা করা যায়, ‘ফাগুনের অগ্নিকণা’ ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে জহির রায়হানের ‘আরেক ফালগুন’ এর পর দ্বিতীয় উপন্যাস।