
আবুল মোমেন
‘বিংশতি।’ কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক আবুল মোমেন সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্বাচিত গল্পের সংকলন। ৩৫২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের অখণ্ড গল্পগুচ্ছের পঁচানব্বইটি গল্প থেকে নির্বাচিত ২০টি গল্প। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আবুল মনসুর।
আলোচ্য বইটির শুরুতেই আছে আবুল মোমেন লিখিত একটি দীর্ঘ ভূমিকা। এই ভূমিকা থেকেই মূলত আমরা জানতে পারি এই বই কেনো এবং এর গুরুত্ব। সম্পাদক বলছেন, ‘আমরা চেয়েছি তার বিশাল গল্পের জগতের সঙ্গে নবীন এবং সাধারণ পাঠকদের পরিচিত করিয়ে দিতে। যেহেতু পরিচয়-পর্ব, তাই এ-পর্যায়ে গল্পের ঝুলির সবটা হাজির করিনি, কুড়িটি গল্পে ভাঁড়ারের চাবিটি ধরিয়ে দিতে চেয়েছি। অখণ্ড গল্পগুচ্ছের বিশাল বপু দেখে যে-পাঠক এগুবেন না তিনি তিন খণ্ডের ভারও বইতে চাইবেন না।…’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গল্প রচনায় হাত দিয়েছিলেন তেইশ বছর বয়সে। অবশ্য এরপরে ৬-৭ বছর হাত গুটিয়ে থেকে তিরিশ বছর বয়সে একেবারে গল্পের জোয়ার এসেছিল। সেই থেকে শুরু। এমনিতেই বাঙালির সাহিত্যভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আর আমাদের ছোটগল্পের সেরা অংশটি বিশ্বসাহিত্যের মানদণ্ডে শীর্ষে থাকবে, এবং সেখানে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প তো এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সৃষ্টি।
গল্প মানুষের এমনই এক আদিশিল্প, যা তার জীবনের মৌলিক চাহিদা, তার সত্তার মজ্জাগত বিষয় এবং তাই এও মানুষের এক মৌলিক অধিকার, যার শুরুটা হতে হয় শৈশবে, চলতে হয় ছাত্রজীবন ছাপিয়ে গোটা জীবনজুড়ে। তবে ইদানীং গল্পের শ্রোতা কিছু মিললেও, পাঠক মেলা ভার। সত্য হলো অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। আমাদের পরীক্ষামুখী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পদ্ধতিটিই এমন যে, এতে প্রশ্নের উত্তর শেখা যত জরুরি, গল্পের বা সাহিত্যের রস গ্রহণ এবং সেই সূত্রে জীবনের অনেকান্ত রূপ ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা তত নয়। উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যারা আদতে পরীক্ষার্থীমাত্র মূল টেক্সট বই পড়ে না। কিন্তু সাহিত্যপাঠ না হলে, কেবল ঘটমান বর্তমানের দোলায় দুলে জীবনের যে অভিজ্ঞতা মেলে তা খণ্ডিত, একপেশে, এ থেকে জীবনের কোনো সত্যরূপ আভাসেও মেলে না। এই পর্যায়ে এই বইটি পাঠক তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে হয়। যেহেতু অল্প পরিসরে রবীন্দ্রনাথের গল্পের জগতের একটা সাবলিল পরিচয় পাওয়া সম্ভব এই বইতে।
রবীন্দ্রনাথের কুড়িটি গল্পের এই সংকলন পাঠকদের জন্যে এক বিশাল ভাণ্ডারের সিংহদ্বার। এই দরজা যিনি সাহস করে খুলবেন তিনি নিশ্চিতভাবেই ভালোবেসে এর মধ্যে জীবনের রসদ পাবেন। আর এভাবে তৈরি হওয়া সম্পর্কটা কেবল অটুট থাকবে না, বিকশিত হবে। কিছু কিছু পাঠকের জীবনে এমন কিছু ঘটলেই এ বই প্রকাশের সার্থকতা মিলবে। ভূমিকায় জানা যায় বইটিতে বিশ্বভারতী অনুসৃত বানানরীতি বজায় রাখার কথা।