মেঘনা পাড়ের মেয়ে
মেয়েটির জন্ম মেঘনা পাড়ে। জীবনের নানা রঙে রঙিন দিনগুলোর সূচনাও সেখানেই। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়সও বাড়তে থাকে, মেঘনা পাড় থেকে চলে আসে সে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে – গ্রাম থেকে শহরে। প্রতিদিন ঘটনার কত ওলট-পালট হয়, আনন্দ-বেদনার যুগলসময় এগিয়ে যায় তার অবধারিত নিয়ম ধরে, জীবনে আসে কত পরিবর্তন। সব মানুষের জীবনেই তো এমনটা ঘটে – হয়তো সবার জীবনে নয়, কারো কারো জীবনে কিংবা হয়তো একেকজনের এক এক জীবনে।
বেশির ভাগ মানুষই একটি ছকধরা জীবনের পথ ধরে এগিয়ে যায়। তবু একেকজনের জীবনের ছক একেকরকম হয়ে ওঠে – সে আমরা বুঝতে চাই বা না চাই।
জয়ন্তী রায় লিখেছেন মেঘনা পাড়ের সেই মেয়েটির গল্প; ঠিক গল্প নয় হয়তো – স্মৃতির গভীর জগৎ থেকে তুলে এনে নিজের জীবনের কাহিনি। তবে এ-কথাও ঠিক, নিছক স্মৃতিকথার দেয়াল পেরিয়ে সে-কাহিনি অবলীলায় হয়ে উঠেছে মন কেড়ে নেওয়ার মতো এক জীবনকথা। জীবনকথা, কিন্তু ঠিক ছকে-বাঁধা জীবনকথার মতো নয়। খুব সহজ সাবলীল একান্তভাবনার অনুষঙ্গে জয়ন্তী রায় লিখেছেন তাঁর নিজের কথা – নিজের কথা তবে নিজেদেরও কথা। এই নিজেদের মধ্যে আছে দেশ, সমাজ, সময় ও নানা মানুষ। তাঁর অনাড়ম্বর বর্ণনার গুণে সে-কথাগুলো অবশ্যই মন ছুঁয়ে যায়, হৃদয়ও। সেখানে যে আছে হৃদয়েরও কথা – একেবারে সোজাসুজি, রাখঢাক ছাড়াই।
মেঘনা পাড়ের মেয়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে আমরাও জেনে যাই দেশের কথা, সময়ের কথা, সুসময়ের কথা, দুঃসময়ের কথা এবং সর্বোপরি একজন ব্যক্তিমানুষের সুখ-দুঃখ, জীবনযাপন, নানা অনুভূতি এবং নিজের জীবন ও চারপাশের জীবন সম্পর্কে কিছু উপলব্ধির কথা। সে-কথা আমাদের অনেকের মনকে নানাভাবে নাড়া দেবে বলা যায় অনায়াসে।