বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

লেখাজোখার কারখানা

Price
350 BDT

Published on
July 2015

ISBN
9789849164302

Category


সৃজনশীল লেখক হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সর্বব্যাপী কৌতূহল যেন, জগৎ-সংসারের নানা বৈচিত্র্যময় বিষয় ও ভাবনা খেলা করে তাঁর করোটির ভেতর লেখক সে-ভাবনাগুলো স্থান দেন নানারকম লেখাজোখায়। কখনো ফিকশনের আদলে, কখনো-বা ননফিকশনের অবয়ব নিয়ে হাজির হয় তাঁর ভাবনাগুলো। কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝবেন আলাপে, বিস্তারে তিনি কত বিচিত্র বিষয় নিয়ে গল্প করেন। লক্ষ করি, কথাসাহিত্যে তিনি যেমন বিচিত্রমুখী, প্রবন্ধসাহিত্যেও তেমন সর্বত্রগামী। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ জীবনের নানা মানবিক, অমানবিক বোধ নিয়ে তাঁর যেমন বিস্তর কৌতূহল, ঠিক তেমনই শিল্প-সাহিত্যের নানা অলিগলি নিয়েও তাঁর সুতীব্র আকর্ষণ। গভীর বিস্ময় নিয়ে এও লক্ষ্য করি, শুধু কথাসাহিত্য নয়, তাঁর আগ্রহ শিল্প-সাহিত্যের শেকড়-বাকড়, ডালপালা, লতাপাতাসহ সমস্তটা নিয়েই। শিল্প-সাহিত্য নিয়ে তাঁর গভীর অনুসন্ধান ও কৌতূহলের এক উজ্জ্বল স্মারক ‘লেখাজোখার কারখানাতে’ শিরোনামীয় গ্রন্থটি। বিশ্বসাহিত্যের বিশ্লেষণধর্মী ২৬টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে এ-বই। প্রথাগত প্রবন্ধ যেমন হয়, বইটির রচনাগুলো তেমন নয়। দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়, প্রবন্ধগুলো চলনে-বলনে-গড়নে অন্যরকম। পেশায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক; অবাক করা বিষয়, তিনি যখন প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখছেন, প্রবন্ধের বিষয় জটিল-কুটিল হলেও তাতে প্রথাগত টীকা-টিপ্পনী নেই; পা-িত্য দেখানোর জন্য বাগাড়ম্বরতাও নেই, সহজ ও প্রাণবন্ত ভাষায় লিখেছেন তাঁর ভাবনার জটাজাল, যার ফলে পাঠকের তরী এগিয়ে যায় তরতরিয়ে। অধ্যাপক হিসেবে নন, শিল্পসমালোচক হিসেবে নন, কলামনিস্ট হিসেবেও নন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সৃজনশীল লেখক হিসেবেই মেলে ধরেছেন তাঁর ভাবনার ঝাঁপি। এতে পত্রস্থ হয়েছে বিদেশের সাহিত্য ও লেখক সম্পর্কে নানা প্রবন্ধ ও নিবন্ধ। ইউরোপ-আমেরিকা ও লাতিন সাহিত্য ছাড়াও পৃথিবীর নানা দেশের সাহিত্য নিয়ে তিনি অনুসন্ধানী রচনা লিখেছেন। লিখেছেন মনোগ্রাহী ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ। তাঁর এসব লেখা চিন্তায়-মননে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনই পাঠে আনন্দদায়ক।

কথাসাহিত্য তাঁর ধ্যানজ্ঞান হলেও বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখেছেন দেদার। বিদেশি লেখক ও বিদেশের সাহিত্য নিয়েও লিখেছেন প্রচুর। বিশ্বসাহিত্যের একজন অনুসন্ধানী পাঠক তিনি। আশির দশকের শুরুতে তিনি পিএইচ.ডি শেষ করে যখন দেশে ফিরে আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন বিশ্বসাহিত্যের প্রচুর বই। ততদিনে তাঁর পড়া হয়ে গেছে বিশ্ব-সাহিত্যের অনেক কিছুই। তখন দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক আবুল হাসনাত, যিনি এ-দেশের একজন অগ্রগণ্য সাহিত্য সম্পাদক, শিল্প-সমালোচক, তাঁর বিশেষ অনুরোধে লিখতে শুরু করেন বিশ্বসাহিত্য নিয়ে। সংবাদের পাতায় নিয়মিত পাক্ষিক কলাম লেখেন প্রায় ২০ বছর। মধ্য আশির দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে শুরু হওয়া ‘অলস দিনের হাওয়া’ শিরোনামে তাঁর কলামটি শেষ হয় শূন্য দশকের মাঝামাঝি সময়ে। কলামটি অগ্রসর এবং বিদগ্ধ পাঠকের নজর কেড়েছিল প্রথম থেকেই। সেখান থেকে নির্বাচিত লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর বই ‘অলস দিনের হাওয়া’। বইটি পাঠকের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। তারপর প্রকাশিত হলো এই ধারার দ্বিতীয় বই ‘লেখাজোখার কারখানাতে’।

শিরোনাম দেখে কেউ-কেউ হয়তো মনে করবেন, লেখালেখির কলাকৌশল নিয়ে বোধকরি এই পুস্তক। এক অর্থে এ-ধারণা মিথ্যে নয়, আবার তা পুরোপুরি সত্যও নয়। লেখাজোখার কারখানাতে কলমশ্রমিক হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যে-মূর্তি নির্মাণ করেছেন, তাতে যেমন মূর্তি গড়ার রসায়ন আছে, তেমনই আছে সেই অবয়বের রূপ-রহস্যের উদ্ঘাটনও। ধারাবাহিকভাবে বইটি পাঠশেষে লক্ষ করি, সাহিত্যের বেশ কিছু প্রবণতা আবিষ্কারের নেশা যেন পেয়ে বসেছিল তাঁকে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে, অনুসন্ধানী পাঠক হিসেবে তাঁকে পাঠ করতে হয়েছে বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়। অ্যাকাডেমিক পাঠপ্রক্রিয়া এক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ সহায়ক ছিল; কিন্তু তিনি যখন লিখেছেন, পাঠকের জন্য ভেবেছেন, তখন পাঠ্যপুস্তকের ধারাটি অনুসরণ করেননি, নিজের উপলব্ধি ও মননসঞ্জাত ভাবনাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বেশি। শিল্পের সৃষ্টি প্রক্রিয়া, সাহিত্যের নানা শাখা-প্রশাখার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক, সাহিত্যের সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক লেনদেন, বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল নিয়ে গভীর আগ্রহ ও জিজ্ঞাসা, বিশ্বের জরুরি লেখক ও রচনা নিয়ে তাঁর অভিমত, পাঠপর্যালোচনা সর্বোপরি বিশ্বের নানা পথ ও মত নিয়ে বোঝাপড়ার প্রয়াস পেয়েছেন। পাশাপাশি নন্দনতত্ত্ব, আধুনিকতা-উত্তরাধুনিকতা, শিল্প-সাহিত্যে রাজনৈতিক দায়, ঔপনিবেশিক প্রভাব ইত্যাকার নানা বিষয় উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *