
সহজ মানুষের ছায়ায়
‘সহজ মানুষের ছায়ায়’ আহমেদ মুনিরের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে, ‘আমি ও বাঘারু’। ‘কালি ও কলম পুরস্কার’ পাওয়া সে কাব্যের নাম থেকেই আহমেদ মুনিরের কবিতার অন্যতম প্রবণতা টের পাওয়া যায় – প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা। এ কাব্যে অবশ্য তিনি সরাসরি প্রকৃতির হয়ে ওকালতি করতে নামেননি। কিন্তু তাঁর কবিতায় অলক্ষ্যেই বারবার চলে আসে প্রকৃতি-প্রসঙ্গ। বারবার আসে পাহাড়-জঙ্গল-বনের দৃশ্যাবলি, সেখানকার বিবরণ। এমনকি তিনি যখন নাগরিক জীবনের টানাপড়েন নিয়েও কবিতা লিখছেন, তাতেও উপমা-উৎপ্রেক্ষা ইত্যাদির অজুহাতে চলে আসে নিসর্গের বর্ণনা।
কাব্যটির বেশ কিছু কবিতা তিনি লিখেছেন প্রকৃতির এমনি নৈসর্গিক সৌন্দর্যম-িত জায়গাকে প্রেক্ষাপটে রেখে – ‘হরিদ্বারের পথে’, ‘রোয়াংছড়ি’, ‘সুন্দরবনের ফুল’। আবার ‘শব্দগুচ্ছ’ নামে যে একটি দীর্ঘ গুচ্ছকবিতা কাব্যগ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে, সেই গুচ্ছকবিতার কয়েকটিতেও এমন জায়গার খোঁজ পাওয়া যায়। আহমেদ মুনিরের দ্বিতীয় কাব্যে প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে কেবল এই প্রকৃতি-প্রবণতার ধারাবাহিকতাই রক্ষিত হয়নি, রক্ষিত হয়েছে আরো একটি অনুষঙ্গ। তাঁর প্রথম কাব্যের পরে এই কাব্যেও আছে ‘বাঘারু’, তাকে নিয়ে এই কাব্যেও স্থান করে নিয়েছে একটি গুচ্ছকবিতা। সেই গুচ্ছকবিতার নামও নিশ্চিতভাবেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় – ‘ডাকছি আবার বাঘারুকে’।
কাব্যটিতে আহমেদ মুনির নাগরিক নানা জটিলতাকেও স্থান দিয়েছেন, তাঁর কবিতাগুলোতে উঠে এসেছে নাগরিক নানা অনুষঙ্গও। কাব্যটিতে সেগুলো কবিতার অনুষঙ্গ হিসেবে প্রচ- গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না উঠলেও, বিশিষ্ট ঠিকই হয়ে উঠেছে। এই অনুষঙ্গগুলোই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, কবি কোন শহরের নাগরিক জীবনের কথা বলছেন, তথা কবির শহর কোনটি – চট্টগ্রাম। আর তাই সেই শহরের খুব কাছেই থাকে পাহাড়ের উপস্থিতি। কাছাকাছি আরো থাকে পাইন বন, পাহাড়ি ঝরনা; আকাশে উড়ে বেড়ায় দুধসাদা মেঘ।
প্রকৃতি-প্রবণতা তথা নিসর্গ-মুগ্ধতা বা তাঁর নিজের শহরের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদিকে কবিতায় স্থান দিয়েছেন বলে; কিন্তু কবি তাঁর সমকালের জাতীয় সমস্যাগুলোর প্রতি উদাসীন হয়ে যাননি। বরং কাব্যের শুরুতে এসব মুগ্ধতা প্রকাশের পর, শেষে এসে বেশ বলিষ্ঠ উচ্চারণে বলেছেন সমকালীন সমাজের অন্তত তিনটি প্রধান সমস্যার কথা – রাজনীতির ক্ষয়, শ্রমিকের প্রতি উপেক্ষা ও ভার্চুয়াল প্রতিবাদের বন্ধ্যত্ব। এই তিন বিষয় নিয়ে কাব্যটিতে স্থান করে নিয়েছে তিনটি কবিতা – ‘নির্বাচন’, ‘আমার কাপড়ে দাগ নেই’ এবং ‘আমি কি করিনি প্রতিবাদ’। আর তারপরে, কাব্যের শেষে, পাঠকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন বিদায়সূচক একটি কবিতা দিয়েই; সে কবিতাটির নামও তাই ‘বিদায়’।