Abul Hasnat
আবুল হাসনাত, কবি-নাম মাহমুদ আল জামান, ছিলেন একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিত্র-সমালোচক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রগতিচিন্তার নিরলস বাহক ও সর্বোপরি একজন সফল সম্পাদক। কালি ও কলমের প্রতিষ্ঠাকাল, ২০০৪ সাল, থেকে এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। এদেশের সাহিত্যের পরিচর্যা ও নবীনদের সাহিত্যপরিম-লে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে তিনি ছিলেন অক্লান্ত। অন্যসব পরিচয় ছাপিয়ে তাই তাঁর সম্পাদক পরিচয়ই সবার কাছে বড় হয়ে উঠেছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে, সহ-সম্পাদক হিসেবে। পরবর্তীকালে ‘সংবাদ সাময়িকী’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দুই যুগেরও বেশি সময়। এ-সময়ে ‘সংবাদ সাময়িকী’ হয়ে ওঠে এদেশের সাহিত্যের দর্পণ। অতঃপর সংবাদ ছেড়ে যোগ দেন কালি ও কলমে। তিনি চিত্রকলাবিষয়ক পত্রিকা শিল্প ও শিল্পীরও সম্পাদক ছিলেন। নির্বাহী পরিচালক ছিলেন বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের। এছাড়া তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে গণসাহিত্য ও প্রণোদনা সাহিত্যপত্রিকা। প্রচ্ছন্নে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আরো পত্রপত্রিকা ও সাহিত্য সংকলনের। মৌলিক রচনা ও সম্পাদনাসহ তাঁর সত্তরটিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮২ সালে টুকু ও সমুদ্রের গল্প বইয়ের জন্য পেয়েছেন ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। ২০১৪ সালে তিনি মনোনীত হন বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো। ২০২০ সালে তাঁর স্মৃতিকথাময় গ্রন্থ প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য অর্জন করেছে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০’। এদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক পরিম-লের সঙ্গেও ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক; যুক্ত ছিলেন ছায়ানটসহ বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। কৈশোর-উত্তীর্ণ কাল থেকে তাঁর সামাজিক দায় ও অঙ্গীকার গড়ে উঠেছিল। এই দায়ই তাঁকে সর্বদা চালিত করেছে বহুমুখিন সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে এতাত্ম হতে ও সে-আন্দোলনকে গতিসচল করার কাজে তৎপর হতে। এই দায় আমৃত্যু তিনি বহন করেছেন আপন জীবনজিজ্ঞাসা ও অন্তরের তাগিদে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ছাত্রাবস্থায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন এদেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নে এবং পরবর্তীকালে যোগ দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রায় পুরোটা সময় পার্টির নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অবিচল লক্ষ্যে কলকাতায় থেকে কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। আবুল হাসনাতের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৭ই জুলাই পুরান ঢাকায়। তাঁর পিতা মোহাম্মদ হোসেন এবং মা মোমেনা খাতুন। তাঁর বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকাতেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এর আগে ১৯৬৫ সালে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সাংবাদিক নাসিমুন আরা হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, নাম দিঠি হাসনাত। নানামুখী গুণের অধিকারী আবুল হাসনাত ২০২০ সালের ১লা নভেম্বর পরলোকগমন করেন।