
ফ্রিদা কাহলো : কিছু কথা ও ডায়েরির পাতা
জাকিয়া রহমান ঋতা পেশায় স্থপতি। ‘ফ্রিদা কাহলো : কিছু কথা ও ডায়েরির পাতা’ তার প্রথম প্রকাশিত বই। অবশ্য লেখালেখির জগতে জাকিয়া রহমানের পদচারণা নতুন কিছু নয়। একটা মানুষকে চিনতে হলে আদর্শ মাধ্যম হতে পারে তার ডায়েরি। বর্ণিল জীবন আর রহস্যময়তার আবরণ ফিদার প্রতি এক দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে শিল্পমোদীদের মাঝে। আবেগী, উদ্দাম, একের পর এক ঘাত-প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত কিন্তু তারপরেও বিস্ময়কর রকমের সজীব এই মেক্সিকান নারীর আত্মজীবনীমূলক চিত্রমালা মানুষের মনে সৃষ্টি করে তীব্র কৌতূহল। ভ্যান গঘের মতোই ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ফিদার ডায়েরি তাঁর অন্য এক রূপ তুলে ধরেছে জনগণের সামনে। আর বাঙালি পাঠকের কাছে তাঁকে আরো নিবিড়ভাবে তুলে ধরলো এই বইটি। বইটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে আছে ফিদার জীবনের যৌনতা, বেদনা, শিল্প, প্রণয়, শৈশব, তাঁর প্রবাসজীবন, রাজনৈতিক জীবন, পরাবাস্তবতার সাথে তাঁর সম্পর্ক, না-পাওয়ার বেদনা, পঙ্গুত্ব ও নানা সংঘাতের কথা। নিজেকে বৈভবের চাদরে মুড়ে রাখা ফ্রিদা জীবনের নানা মোড়ে বারবার গড়ে তুলেছেন নিজেকে, মানিয়ে নিয়েছেন পরিবর্তনের সাথে। পরের অংশ ফিদার ডায়েরি। ১৯৪৪ সালে এর যাত্রা শুরু। বিচিত্র এর বিষয়বস্তু। ফ্রিদা যে কেবল ডায়েরি লিখেছেন তা নয়, এতে সংযুক্ত হয়েছে কাব্য। ফ্রিদার ডায়েরির অংশগুলির পাশাপাশি এখানে যুক্ত আছে অসংখ্য চিত্রকর্ম, যেগুলি ফ্রিদার জীবনের নানা খুটিনাটিকে নির্দেশ করেছে।
অনুবাদকর্মটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে কিছু অতিরিক্ত সংযোজন। জাকিয়া রহমান ঋতা ডায়েরিটি অনুবাদ করেছেন ইংরেজি থেকে। তিনি ইংরেজি সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত কিংবদন্তিসম মেক্সিকান সাহিত্যিক কার্লোস ফুয়েন্তেসের লেখা ভূমিকা এবং সারাহ এম লো-এর টিকাভাষ্যগুলিকেও অনুবাদ করেছেন। সেই সাথে আছে ফ্রিদার একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী, ফলে সবমিলিয়ে বইটি পূর্ণাঙ্গ একটি মাধ্যম হিসেবে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে ফ্রিদার সাথে। প্রথম বই হলেও জাকিয়া রহমান ঋতাকে এক মুহূর্তের জন্যেও নবিশ অনুবাদক মনে হয়নি। সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা বইটি সংবেদনশীল, গতিময় ও সুখপাঠ্য। ব্যতিক্রমী এই প্রয়াসকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে বইটির সাথে সংযুক্ত অনেকগুলি সাদা-কালো ও রঙিন ছবি, যেগুলিতে উঠে এসেছে শিল্পী ফ্রিদার জীবন ও শিল্পকর্ম। মেক্সিকোর রহস্যমণ্ডিত কন্যাকে কাছ থেকে জানতে ও বুঝতে হলে বইটি অবশ্যপাঠ্য।