
সফিউদ্দীন আহমেদ
সফিউদ্দীন আহমেদ। শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণামূলক এই বইটি রচনা করেছেন সৈয়দ আজিজুল হক। সফিউদ্দীন আহমেদের একটি ছাপচিত্র অবলম্বনে প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
আমাদের দেশে আধুনিক শিল্পকলার চর্চায় বিশেষত ছাপচিত্রের আধুনিকায়নে সফিউদ্দীন আহমেদ পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছেন। নিজের কাজের ক্ষেত্রে তিনি সব সময়ই পরিবর্তনের প্রয়াসী ছিলেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত শিল্পভাষা অতিক্রম করা একজন শিল্পীর পক্ষে সহজ নয়। কিন্তু তাঁর কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, গত শতকের চল্লিশের দশকে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালদের জীবন ও প্রকৃতি নিয়ে যে আঙ্গিকের কাজ করেছেন, পরে পঞ্চাশের দশকে সেই আঙ্গিকের পরিবর্তন করেছেন। মাছ ও জেলেদের নিয়ে কাজের মধ্য দিয়ে এক নতুন চিত্রভাষা তিনি উপহার দিয়েছেন। আর পরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবং বানভাসি মানুষের কাজের ক্ষেত্রে তিনি চোখ ও নৌকার গলুইতে যে আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন, সেখানেও একটি পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট। এমনকি জীবনের শেষ পর্যায়ের কাজগুলোতেও তিনি বাঁক বদল করেছিলেন।
শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ ১৯১২ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল থেকে চারুকলায় স্নাতক এবং ১৯৫৮ সালে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাপচিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশ-বিদেশে অনেক পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।
বইটিতে মূলত শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্যাপক পরিসরে জানার সুযোগ মিলে। এটি পড়লেই বোঝা যায় শিল্পীর ওপর রচিত এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বই। আগ্রহী পাঠকের কাছে তো বটেই, এটি চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি পাঠ্য হতে পারে।
মাধ্যমগত নিরীক্ষায় ব্রতী হওয়ার বিষয়টিও সফিউদ্দীন আহমেদের শিল্পবৈশিষ্ট্যের অংশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে করেছেন ড্রইং আর অয়েল পেইন্টিং। ছাত্রজীবনের পর তিনি আর জলরঙে ছবি আঁকেননি। ছাত্রজীবনেই শুরু করেছিলেন উড এনগ্রেভিং মাধ্যমের চর্চা, সেটি লন্ডন যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কলকাতায় শিক্ষকতা কোর্সে অধ্যয়নকালে ড্রাই পয়েন্ট করেছিলেন, তারপর আর করেননি। ওই সময়েই কোর্সের প্রয়োজনে লিথোগ্রাফ ও ম্যুরাল করেছিলেন, কিন্তু পরে আর এ-বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি।বইটিতে তাঁর বিভিন্ন পর্বের কাজ সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর জলরঙে আঁকা ছবি, ড্রইং, তেলরং, ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ (এচিং, একুয়াটিন্ট, এনগ্রেভিং, ড্রাই পয়েন্ট, উডকাট, লিনোকাট ইত্যাদি) নানা মাধ্যমে আঁকা ছবি তথা শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানা যায়। পাশাপাশি জানা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আঁকাআঁকির পট পরিবর্তন, তাঁর শিল্প ভাবনা, জীবনবোধসহ আরো নানামাত্রিক বিষয়।