
কবিতাশতক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্বাচিত শত কবিতা
‘কবিতা শতক।’ কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক আবুল মোমেন সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্বাচিত কবিতার সংকলন। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আবুল মনসুর। ২৭২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা ৪৬৭টি কবিতা থেকে নির্বাচিত ১০০টি কবিতা। এটা বলা বাহুল্য যে, প্রকাশের পর থেকে গত ৮০ বছর ধরে ‘সঞ্চয়িতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার প্রতিনিধিত্বশীল একমাত্র সংকলনগ্রন্থ হিসেবে বাঙালিসমাজে সমাদৃত হয়ে আসছে।
আলোচ্য বইটির শুরুতেই আছে আবুল মোমেন লিখিত গবেষণা সন্দর্ভসম একটি দীর্ঘ ভূমিকা। এই ভূমিকা থেকেই মূলত আমরা জানতে পারি এই কাব্য-সংকলনটি কেনো এবং এর গুরুত্ব। সংকলনটি ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ থেকে ‘মরণ’ কবিতাটি দিয়ে শুরু হয়েছে এবং তারপরেই ‘প্রভাতসংগীতে’র সেই ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’কবিতাটি। এবং শেষ হয়েছে বর্তমানে প্রচলিত সঞ্চয়িতার মতোই ‘শেষলেখা’র ‘তোমার সৃষ্টির পথ’কবিতাটি দিয়ে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বিসর্জনের মতো পূর্ণাঙ্গ কাব্যনাট্য লিখেছেন, তেমনি অপেক্ষাকৃত ছোট আকারেও অনেকগুলো লিখেছেন, যার বেশ কয়েকটি তিনি সঞ্চয়িতায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেমন গান্ধারীর আবেদন, কর্ণকুন্তী-সংবাদ। এগুলো বাদ পড়েছে বইটি থেকে। তবে একটি নমুনা হিসেবে ‘বিদায়-অভিশাপ’ এ সংকলনে রাখা হয়েছে। সঞ্চয়িতায় সংগতভাবেই গীতবিতান থেকে বেশ কিছু গান রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সংকলনে ওইঅর্থে কোনো গান নেই। ‘পুরাতন ভৃত্যে’র মতো অতিপরিচিত স্কুলপাঠ্য কবিতাও বাদ রাখা হয়েছে। মূলত এই বইয়ের লক্ষ্য ছিল নিখাদ রবীন্দ্র-কবিতার পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম এমন একটি সংকলন তৈরি।
বইয়ের ভূমিকা থেকে জানা যায়, এই সংকলনের জন্য যে ‘সঞ্চয়িতা’ অনুসরণ করা হয়েছে তা ২০০৯ সালের মুদ্রণ। আর এর সামগ্রিক যথার্থতার জন্য আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৫ খণ্ডের রবীন্দ্র কবিতাসমগ্রও খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। সঞ্চয়িতার ক্রম অনুসারেই কবিতাগুলো সাজানো হয়েছে। পরিশিষ্টে সংযোজিত শিরোনাম-সূচিতে বই-পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। বইটি ব্যবহারে সুবিধার জন্যে শেষে বর্ণানুক্রমিক দুটি সূচি দেওয়া হয়েছে, ক. শিরোনাম-সূচি ও খ. প্রথম ছত্রের সূচি শিরোনামে।
এ বই কিছু পাঠকের মধ্যে খাঁটি কাব্যক্ষুধা জাগিয়ে তুলতে পারবে, এবং তারা এসব কবিতা কেন, রবীন্দ্রনাথের সব কবিতাই পড়তে আগ্রহী হবেন একদিন। বইটিতে আছে কালের বিচারে শতবর্ষ অতিক্রমণকারী সব কবিতা, যা, বাস্তবতা ও প্রবণতা দেখে স্বাভাবিক বুদ্ধিতে বলা যায়, ভবিষ্যতেও অনায়াসে শত শত বছর অতিক্রম করবে।