
কবিতা সংগ্রহ-২
‘কবিতা সংগ্রহ।’ বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কবি তারিক সুজাতের তিনটি কবিতার বই যথা ১. যাবো বলে থেমে থাকতে নেই, ২. সময়কে আমি উল্টো পায়ে হেঁটে যেতে দেখেছি, এবং ৩. আকাশ পুরাণ-এর সংকলন এই বইটি। কাইয়ুম চৌধুরীর করা সুন্দর এক প্রচ্ছদমণ্ডিত এই সংকলনটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ১০৪।
বাংলা কবিতায় তারিক সুজাত সৃজনশীল কবি হিসেবে স্বোপার্জিত মুদ্রায় নিজেকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৬৫ সালে ঢাকায়। কাব্যগ্রন্থ ‘প্রতিবিম্ব ভেঙে যাও’ (১৯৮৬), ‘যাবো বলে থেমে থাকতে নেই’ (১৯৯৭), ‘সময়কে আমি উল্টো পায়ে হেঁটে যেতে দেখেছি’ (২০০৩), ‘আকাশ পুরাণ’ (২০০৯) ইত্যাদি ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে অকালপ্রয়াত কবি আবুল হাসান-এর গল্প সংগ্রহ ও কাব্যনাটক ওরা কয়েকজন । বাংলাদেশের অনভিপ্রেত দীর্ঘ সামরিক স্বৈরশাসনকালে প্রকাশিত নিষিদ্ধ ঘোষিত একাধিক পত্রপত্রিকা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রেও তারিকের কৃতিত্ব প্রশ্নাতীত।
গত শতাব্দী অর্থাৎ বিশ শতকের আশির দশক থেকে তারিক সুজাত কবিতাচর্চা শুরু করেন। তাঁর কাব্যশৈলী ও বাক-প্রতিমায় নব মাত্রা সঞ্চারিত হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাব্যামোদীদের দৃষ্টি আকর্ষণে তিনি সমর্থ হন। তাঁর কবিতায় রোমান্টিক বেদনার তাপ যেকোনো পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করে। একই সঙ্গে স্বদেশের মর্মযাতনা তাঁর সৃজনে গভীর এক বোধে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যুগচেতনার প্রতিচ্ছবি, সঙ্গে নিসর্গের অন্তর্নিহিত আবেগ তাঁকে করে তোলে বাংলাদেশের কবিতার ভুবনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল এক কবি। তারিক সুজাত এখানেই বিশিষ্ট।
তারিক সুজাত যখন কবিতা লিখতে শুরু করেন, বাংলাদেশের কবিতা তখন শাসন করছিলেন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কবিরা। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশে তখন বিশেষ এক ধরনের কবিতার আধিপত্য চলছিল। তারিকের সামনে তখন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, ওই ধারার বাইরে গিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার। তিনি যে সেই চ্যালেঞ্জ জোড়ালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন, তা তাঁর কবিতার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়।
আজকের প্রেক্ষাপটে কবিতাকে হয়ত নতুন কিছু মনে হবে না, তবে এটা নিশ্চিত তিনি যখন লিখতে শুরু করেছিলেন তখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কবিতাগুলো নতুন ধরনেরই মনে হত। আর এই নতুন কবিতার কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি অনুসন্ধানী হাত বাড়িয়েছিলেন যেমন পশ্চিমা বিশ্বের কবিতার দিকে, তেমনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কবিতার দিকেও। তিনি তাঁর সময়ে নতুন কবিতা নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। নতুন শব্দটি এমন এক শব্দ যার জন্মই হয়েছে পুরনো হয়ে যাওয়ার জন্য, তাই দেখা যায় আজ যা নতুন দিন ফুরোলেই তা পুরনো। তাঁর কবিতার মধ্যে এমন কিছু ভাবের আমরা দেখা পাই যার সঙ্গে চিরায়ত চিন্তাজগতের ঐক্য রয়েছে, আর এই ঐক্যই তাঁর পরবর্তী কবিদের মধ্যে টিকে থাকার অস্ত্র। তাঁর কবিতাগুলির দিকে তাকালে আমরা এক ধরনের দার্শনিক অনুভূতির দেখা পাই।