
কোথায় তুই
একটি প্রেমের কবিতার বই, নাম ‘কোথায় তুই’। কবি মাহ্বুব হাসান সালেহ্র প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তাতে স্থান পেয়েছে মোট ৩৯টি কবিতা। এই কবিতাগুলোকে একত্রে তাঁর কবিমানসের একটা যাত্রা হিসেবে ধরা যেতে পারে, যে-যাত্রার অভিমুখ অতীতপানে। সে অতীত বাস্তব হতেও পারে, আবার কবির কল্পনার জগৎও হতে পারে। যে জগতেরই অতীত-স্মৃতি কবির এই কবিতাগুলোর উৎসারক হিসেবে কাজ করে থাকুক, কবিতাগুলোতে সেই উৎসারণ বেশ সার্থক হয়েছে; কবি সে অতীতকে কবিতায় সত্যিই বাক্সময় করে তুলেছেন, প্রাণনায় ভাস্বর করে তুলেছেন।
কবিতাগুলোর এই সামগ্রিক যাত্রা কবির কৈশোর-তারুণ্যের সময়ের প্রতি। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, কবির কৈশোর-তারুণ্যের পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ প্রেমের প্রতি। কবিতাগুলোর উপজীব্য তাঁর সফল-অসফল স্থায়ী-অস্থায়ী প্রেমিকা ও তাদের সাথে কাটানো সোনালি সময়গুলো। কৈশোর-তারুণ্যের প্রেমিকা বলেই তাদের প্রতি সম্বোধন ‘তুমি’ নয়, ‘তুই’। তাদের অন্বেষণের যাত্রা বলে, সে-যাত্রার নামকরণ ‘কোথায় তুই’। এই সম্বোধনের সমর্থন কেবল বইয়ের নাম এবং নামকবিতাতেই নয়, বরং সব কবিতাতেই পাওয়া যায়। সূচিপত্রে চোখ বুলালেও সে সমর্থন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়; আরো কয়েকটি কবিতাতেও আছে এই সম্বোধন – ‘কেমন আছিস’, ‘তুই শুধু আমার’, ‘তুই আমার কী’, ‘বেঁধে রাখিস’।
কাব্যগ্রন্থটির নামে এর কবিতাগুলোর আরেকটা বৈশিষ্ট্যও পরিষ্কার। নামটা পড়তে প্রশ্নবোধক মনে হলেও, তার শেষে কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন নেই। কারণ, নামটি প্রশ্নবোধক নয়, বিবৃতিমূলক। কবিতাগুলোতে কবি তাঁর কৈশোর-তারুণ্যের প্রেমিকাদের স্মৃতিতর্পণ করেছেন; তাতে এক ধরনের বিষণœতা আছে, বহু দিনের ধুলো-জমা পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থনের বিষাদময় ভালো লাগা আছে, সোনালি সেই স্মৃতিগুলো হৃদয়ের মণিকোঠায় রয়ে যাওয়ার বেদনাবিধুর আনন্দ আছে, কিন্তু তাদের কবি খুঁজে বেড়াচ্ছেন না। স্রেফ স্মৃতিতর্পণ করছেন।
অতীত হয়ে যাওয়া এই প্রেমিকাদের খুঁজে বেড়ানোরও কোনো মানে হয় না। প্রেম অনেকটা সময়ের মতোই। যখন প্রেম আসে, বানের জলের মতো সব গ্রাস করে নেয়। তারপর একদিন সময়ের মতোই বইতে বইতে কোথায় যেন চলে যায়। কিন্তু সময় যেমন তার ছাপ রেখে যায়, তার প্রভাব এড়াতে পারে না কেউ, তেমনি প্রেমও; তার স্মৃতিটুকু থেকে যায়। এই স্মৃতিগুলো ভীষণ অর্থবহ, ভীষণ জরুরিও। সেগুলো কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কেউ চাইলেও ভুলে যেতে পারে না। কবিরও হয়েছে তেমনটা; কিংবা তাঁর কবিতার উৎস যে জগৎ, সে জগতে ঘটেছে তেমনটাই।
কবি সেই স্মৃতিগুলোই স্মৃতির মণিকোঠা থেকে ছেঁকে ছেঁকে তুলে এনে একেকটা মণির মতো ঝকমকে কবিতায় রূপান্তরিত করেছেন। সেই কবিতাগুলোরই সংকলন ‘কোথায় তুই’। যে কবিতাগুলোর প্রতিটিতে কবি কোনো এক মায়াবী প্রেমিকার স্মৃতি রোমন্থন করছেন, কোনো এক মোহময়ী নারীর সাথে কাটানো সময়টুকু মনে করে আপ্লুত হচ্ছেন; যেন তাঁকে নেশায় পেয়েছে, কোনো এক ‘তুই’ তাঁকে নেশাগ্রস্ত করে রেখেছে, নেশাগ্রস্ত কবি খুলে ধরেছেন তাঁর স্মৃতির জার্নাল, উল্টে যাচ্ছেন একের পর এক পাতা।