
জীবনানন্দ দাশের চারটি উপন্যাস: মূলানুগ পাঠ
জীবনানন্দ দাশের চারটি উপন্যাস: মূলানুগ পাঠ। ভূমেন্দ্র গুহের লেখা এই বইটি নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বইটি জীবনানন্দ দাশের চারটি উপন্যাস যথা ‘মাল্যবান’, ‘সুতীর্থ’, ‘কারু-বাসনা’ ও ‘আমরা চারজন’-এর মূলানুগ পাঠ ও তার গ্রন্থনা সম্পর্কে ভূমিকা কিংবা এই সংশ্লিষ্ট রচনা হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি, বইটি হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সকল রচনা মানে কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির ওপর রচিত একটি ছোট গবেষণা সন্দর্ভ। এসেছে বহুমাত্রিক আরো অনেক বিষয়।
জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পরে কারো ধারণাই ছিল না যে তাঁর ট্রাঙ্কের ভিতর এতগুলি অপ্রকাশিত গল্প ও উপন্যাস রয়েছে। তিনি মনে করতেন যে সমাজ ও অর্থনীতির সমস্যায় বহু মানুষের জীবন চিরকাল এক দুষ্টচক্রে আবর্তিত হচ্ছে। এইসব পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যে উপন্যাস লিখেছেন তার কাঠামো সাধারণ উপন্যাসের থেকে আলাদা, যেমন মনে হবে এই উপন্যাসের শুরুও নেই, শেষও নেই। তাঁর কতিপয় সাহিত্যিক বন্ধুও তাঁর উপন্যাস পড়ে বলতেন যে, এই উপন্যাস লেখার ব্যাকরণ মানছে না, তাই এগুলি চলবে না। তাই জীবনানন্দ নিজেও এগুলিকে ঘষা-মাজা করে প্রকাশ করার চেষ্টা করেননি। তাঁর নিজের কিন্তু বিশ্বাস ছিল যে, মানুষের আসল সমস্যাকে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে এরকম উপন্যাসের প্রয়োজন আছে। ফলত তিনি কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে কয়েক ডজন খাতা ভর্তি করে এত গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। তিনি এও জানতেন যে, ইউরোপের কিছু নামী লেখক এই ধরনের উপন্যাস লিখেছেন। তবে তাঁর সকল উপন্যাসই একান্তভাবে মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনযন্ত্রণা নিয়ে।
জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস নানা প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এক পাঠের সঙ্গে অন্য পাঠের রয়েছে নানা অসংগতি। প্রকাশিত উপন্যাসগুলির বিভিন্ন জায়গায় যে অসংগতি ছিল কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রক্ষিত মূল পাণ্ডুলিপি দেখে তা সংশোধন করেছেন ভূমেন্দ্র গুহ।
বইটির শুরুতে বেঙ্গল পাবলিকেশনসের নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাতের লেখা মূলানুগ পাঠ বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ ভূমিকা আমরা পাই। তারপর পাই ভূমেন্দ্র গুহের মৃত্যুর পর তার স্মরণে কবি গৌতম বসুর ‘তার হাতে জীবনানন্দের ক্রমমুক্তি ঘটেছে’ শিরোনামের একটি লেখার সংযোজন। যেটা এই সংযোজনের পূর্বে আনন্দবাজার পত্রিকার ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫-তে প্রকাশ পায়। লেখাটি যদিও বেঙ্গল পাবলিকেশনস কর্তৃক প্রকাশিত ‘নির্বাচিত জীবনানন্দ দাশ : মূলানুগ পাঠ’ ও ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতা : মূলানুগ পাঠ’ এই দুটি বইয়ের ওপর লিখিত। তবু এই সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, লেখাটি পড়লে মূলানুগ পাঠ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।তারপর মূল বইয়ে প্রবেশ করলে আমরা পাই ভূমেন্দ্র গুহের জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য সম্পর্কিত দীর্ঘ রচনা, ‘জীবনানন্দ ধাঁধা।’ আর সবশেষে আছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার বিষয়ে ভূমেন্দ্র গুহের একটি লেখা।