
নির্বাচিত তিন উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২০১৭
মূল্য : ৫৫০ টাকা
গ্রামজীবন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লেখা ইমদাদুল হক মিলনের তিনটি বিখ্যাত উপন্যাসের সংকলন হচ্ছে এই ‘নির্বাচিত তিন উপন্যাস।’ উপন্যাসগুলি হলো ১. ভূমিপুত্র, ২. কালোঘোড়া এবং ৩. নদী উপাখ্যান।
‘ভূমিপুত্র’ জোতদার এবং কৃষকদের তীব্র বিরোধের উপাখ্যান। উপন্যাসে আমরা দেখি সামন্ত সমাজকাঠামোয় বন্দী ভূমিদাস শ্রেণীর মানুষের জীবনপিপাসার তীব্র আকুতি ও জীবনসংগ্রামের রক্তাক্ত পরিণতি। এখানে ভূমির মালিকানা পরিবর্তনে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অবস্থার পরিবর্তন, সম্পদশালী মানুষের ব্যভিচার ও ভূমিনির্ভর মানুষের শ্রমের ন্যায্য মূল্য আদায়ের জন্য ব্যর্থ সংগ্রাম উপস্থাপন কার হয়েছে, ভূমিহীন কাদের, হজু প্রমুখের জীবন ধারায় ভূমি না থাকার বিড়ম্বনা প্রকটিত হয়েছে। ভূমিহীন মানুষের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাওয়াও যে দুরূহ তাও স্পষ্ট হয়েছে কাদেরদের সঙ্গে বেপারিদের ধান কাটার বিরোধের ঘটনায়। এই উপন্যাসে, ভূমি সমস্যার মূলে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মানুষের প্রভাব প্রতিপত্তির বিপরীতে সাধারণ জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা রূপায়িত হয়েছে, যা স্পষ্টতই বাংলাদেশের ভূমি ও মানুষের আন্তঃসম্পর্কের বাস্তবতারই রূপায়ণ।
‘কালোঘোড়া’ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস। ১৯৭১ এর সেই জেগে ওঠার দিনে বাংলাদেশের একটি গ্রামে কেমন চেহারা নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, কেমন করে মুক্তিযুদ্ধ প্রভাবিত করেছিল গ্রামের প্রতিটি মানুষকে, কেমন করে মুক্তিযোদ্ধারা এসে আশ্রয় পায় এক বালকের কাছে, কেমন করে প্রাণ হারায় এব বোবা যুবতী, স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হোতা কেমন করে নিহত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আর কেমন করেই বা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা সেই বালক নিজের অজান্তে হয়ে ওঠে এক মহান মুক্তিযোদ্ধা, প্রাণের বিনিময়ে যে রক্ষা করতে চায় সহযোদ্ধাদের এরকম অনেকগুলো বিষয় ‘কালোঘোড়া’ উপন্যাসে উপজীব্য করেছেন লেখক। ঘোড়াটি ছিল রাজাকার সিরাজ চেয়ারম্যানের। মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজকে গুলি করে মারার পর সেই ঘোড়াটির গায়ে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি লিখে মুক্ত করে দেন। যুদ্ধ শেষে নিজ গ্রামে বসে চার যোদ্ধাবন্ধু যখন হতাশার কথা বলেন, তখন স্বাধীনতার প্রতীক ঘোড়াটি সামনে এলে তাঁরা তার পিছু নেন। কিন্তু সেই ঘোড়াটি তাঁদের কাছে ধরা দেয় না। ১৯৮১ সালে জার্মানিতে বসে উপন্যাস লিখেছিলেন ইমদাদুল হক মিলন।
‘নদী উপাখ্যান’ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে মূলত চর দখল নিয়ে। জেগে ওঠা চর দখল করতে গিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের রক্তে লাল হচ্ছে নদীর পানি। তারপর নদী ভাঙন। ভূমিনির্ভর মানুষের জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। নদী ভাঙন কবলিত অঞ্চলের ভূমিকেন্দ্রিক গ্রামীণ মানুষের জীবন-কথাই উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য।