
পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ
পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ‘পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ।’ বইটা মূলত বিশ্বখ্যাত পর্বতারোহী এড ভিশ্চার্স রচিত ‘নো শর্টকাট্স টু দ্য টপ’ বইয়ের বাংলা ভাষান্তর। বইটির এই ভাষান্তর করেছেন সজল খালেদ। তিনি নিজেও একজন পর্বতারোহী।বইটি একটি খুবই গুরুত্ববহ ভূমিকা লিখেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
লাটভিয়ান ও জার্মান পিতামাতার ঘরে ১৯৫৯ সালের ২২ জুলাই আমেরিকার ফোর্ট ওয়েইন, ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন এডমান্ড ভিশ্চার্স। এড ভিশ্চার্স নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ১৮ বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় বিখ্যাত আমেরিকান পর্বতারোহী এড ভিশ্চার্স জয় করেছেন মাউন্ট এভারেস্টসহ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১৪টি দুর্গম পর্বতচূড়া। তার সেই ১৪টি পর্বতারোহণের দুঃসাহসিক অভিযানের অভিজ্ঞতাই বর্ণিত হয়েছে আলোচ্য বইটিতে।
অল্প বয়স থেকেই নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছেন তিনি নিজেকে জীবনের এই একটিমাত্র লক্ষ্য অর্জন করবেন বলে। তিনিই প্রথম মার্কিন মাউন্টেনিয়ার, যিনি এভারেস্টের শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন একবার নয়, সাত-সাতবার। এছাড়া তিনি অন্নপূর্ণা, কেটু, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ধবলগিরি, মাকালু, নাঙ্গা পর্বতের মতো ৮০০০ মিটারের বেশি উঁচু সব কটি পর্বতচূড়ায় আরোহণ করেছেন, এবং রেকর্ড গড়েছেন একটিতেও অক্সিজেন সাপিমেন্ট ব্যবহার না করে। তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা চমৎকার প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করেছেন তিনি এই বইয়ে।
প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মধ্যে দুর্জয়, দুরারোহ পর্বতের প্রতি স্বভাবজাত দুর্বার আগ্রহ ও আকর্ষণ রয়েছে। ওই উঁচু-উঁচু পর্বতের মাথায় দাঁড়িয়ে নিজেকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার কথা কল্পনা করলেই আমাদের বুকে শিহরণ জাগে। কিন্তু বাস্তবে যাঁরা সেখানে যান তাঁদের কতটা অধ্যবসায়ের সঙ্গে নিজেকে কষ্টসহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে হয়, শারীরিক ফিটনেসের জন্য কেমন অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়, অদম্য সংকল্প নিয়ে কীভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় করে বিপদের মুখে ঝাঁপ দিতে হয় সেসব বর্ণনা রয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়।
আত্মজীবনীমূলক এই রচনায় বাঙালি পাঠকের প্রায়-অপরিচিত একটা জগতের স্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে, যা ছোট-বড় সবার মন টানবে। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে, যেন সবকিছু চোখের সামনে। বইটির ঝরঝরে, সাবলীল ভাষান্তর অসংখ্য ঘরকুনো বাঙালির মস্ত উপকার করেছে। দুঃসাহসী, অভিযানপ্রিয় বাঙালির অন্তর স্পর্শ করবে এ-বই, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধ্যসাধনের প্রয়াসে।
যেহেতু অনুবাদক নিজেও একজন পর্বতোৎসাহী ও ফিল্মমেকার। তাই এসব দুঃসাহসিক অভিযানের খুঁটিনাটি সহজ ও সুন্দরভাবে দরদের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ফলত বইটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটানা পড়ে শেষ করা যায়।