
পশ্চিমের গুপ্তচর
আধুনিক বাংলা কবিতার এক পরিচিত নাম হাবীবুল্লাহ সিরাজী । রোমান্টিকতা, তীক্ষ্ণ বিচক্ষণ্ণতা এবং সাবলীল ভাষার মিশেলে যে কাব্যজাদুর জন্য তাঁর খ্যাতি, ‘পশ্চিমের গুপ্তচর’ কাব্যগ্রন্থে তা-ই আবার ফিরিয়ে এনে চমৎকৃত করেছেন কবি ।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সৃষ্টি প্রতিভার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে ইমেজারি। চেনা পরিচিত শহুরে জীবনের খণ্ডচিত্রের সাথে কবিতার অনুভূতি এবং অক্ষর জড়িয়ে দিয়ে এক মোহময় জগৎ সৃষ্টি করেন। তাই তাঁর কবিতায় অতিপরিচিত ছাইরঙা ক্লেদাক্ত ছাদ আসে, আর তা হয়ে ওঠে পূর্ণিমার লীলাক্ষেত্র, ‘জলছাদে পাইপ গুঁজে দেয়া আছে/ তা দিয়ে নিয়মিত বের হয় বর্জ্য/ যতো মস্করা তার অর্ধেক আস্কারা পেলে/ রেলিং টপকে ঝাঁপ মারতো পূর্ণিমা’। আবার সিনেমার মতো সাবলীলতায় কোনো কোনো কবিতার শরীর নিয়েছে অপ্রত্যাশিত বাঁক, যেমনটা দেখা যায় বইয়ের ‘১৯৭১’ নামের কবিতায় । মাত্র ১১ লাইনের কবিতায় কবি প্রতিদিনকার সুখী সকালের অক্ষরচিত্র এঁকেছেন, তারপর সেটাই উলটে দিয়ে হতবিহ্বল করেছেন পাঠককে । প্রায় প্রতিটি কবিতাতেই এসেছে প্রেমের অতৃপ্ত পিপাসা এবং উপাসনা, এসেছে জীবনের নানা প্রাত্যহিকতায় অর্থ খোঁজার প্রচেষ্টা । গদ্যকবিতার স্বাভাবিকতার মাঝেমধ্যে ছন্দ নিয়েও পরীক্ষা করেছেন কবি।
হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে, ১৯৪৮ সালের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বরে। কবিতার কোমল কুসুমে মজলেও কবির শিক্ষা এবং কর্ম জীবন আবর্তিত হয়েছে নিষ্করুণ যান্ত্রিকতাকে কেন্দ্র করে। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক হন তিনি। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সাহিত্যিক জীবনে ৩২টি কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি ২টি উপন্যাস, ৩টি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং ১০টিরও বেশি শিশুতোষ গ্রন্থ লিখেছেন তিনি । এছাড়া রয়েছে তাঁর স্মৃতিকথামূলক রচনা ‘আমার কুমার’ (২০০৭)। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৯ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ভারত থেকে স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে বিষ্ণু দে পুরস্কার এবং ২০০৯ সালে হায়দরাবাদে বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বর্তমানে বাংলাদেশ কবিতা পরিষদের সদস্য। এছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি।