
ফাদার সিয়ের্গি
‘ফাদার সিয়ের্গি।’ লিয়েফ তলস্তয় রচিত লেখা একটি অসাধারণ আখ্যান। এটি বাংলায় ভাষান্তর করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। এটির বাংলা অনুবাদ আলাদা মলাটে প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য ।
তলস্তোয় ১৮২৮ সালে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম কথাশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার দুইটি উপন্যাস ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ এবং ‘আন্না কারেনিনা’ বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সৃষ্টি করে । তিনি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ১৯১০ সালের রাশিয়ার আস্তাপোভো নামক এক প্রত্যন্ত স্থানের রেলস্টেশনে মারা যান। ১৯২৮-১৯৫৮ এর মধ্যবর্তী সময়ে তার সাহিত্যকর্ম ৯০ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রকাশিত হয় ।
আলোচ্য বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে আমাদের গল্প যেখানটায় শেষ, সেখান থেকে লেখকের মূল গল্প শুরু। কেননা তিনি আত্মার দিকে তাকিয়ে থাকেন, যা হয়তো হারিয়ে গেছে। এ গল্প খ্রিষ্ট্রীয় চিরায়ত প্রেম-নৈতিক আবহে নির্মিত। এ নির্মাণে আদর্শবাদী ঈশ্বরের জগত যেভাবে বিদ্যমান, তার সমান্তরালে আরেকটি দ্বন্দ্বমুখর পঙ্কিল পৃথিবীর জীবনও বিদ্যমান। তলস্তয় ভুলে যান না যে, বিশেষ মানুষের বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা। এ বিশেষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যে সামগ্রিকতার ধারণা হাজির হয় তা বিস্ময়কর। ফলত তার খ্রিষ্ট্রীয় নৈতিক আদর্শ বিশেষের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে নতুন অর্থ তৈরি করে। সার্বিকের মধ্যে তার মানুষগুলো হারিয়ে যায় না। তারা প্রত্যেকেই নিজস্ব আলোতে উজ্জ্বল। তলস্তয় একের পর এক সিঁড়ির ধাপ পার হয়ে অতি আশ্চর্য বোধের জগতে পৌঁছেন।
‘ফাদার সিয়ের্গি’ আখ্যানটিকে বলা যায় তলস্তয়ের আত্মজৈবনিক আখ্যান। ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নিচুতলার মানুষ এর সাথে মিশে যাওয়া এবং নিজের সমাজ ত্যাগ করে অন্য সমাজে মিশে যাওয়া সকল কিছুই তার জীবনের অংশ । তার জীবন ছিলো একজন অভিজাত পরিবারের ছেলের জীবন যেমন হয়, মদ্যপ, জুয়াড়ি ও আরো নানা সমস্যা ছিলো তার চরিত্রে । তার জীবনের অনেক সময় নিয়ে তিনি অন্যান্য লেখার ফাঁকে ফাকে এই বইটির কাজ শেষ করেন যা আমাদের এই লেখকের জীবন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি একটি অসাধারণ আখ্যানের স্বাদ দিতে পারে ।