
বিশ শতকের বিশ্বকবিতা
কথা যখন অনুবাদ কবিতা নিয়েই হবে, তখন ২০১৬ সালে কান চলচিত্র উৎসবে পাম ডি-অর পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত চলচ্চিত্র ‘প্যাটারসন’-এর উদ্ধৃতি না দিলেই নয় । জিম জারমুশের এই চলচ্চিত্রে অনুবাদ কবিতা পড়াকে বলা হয়েছে, ‘গাতে রেইনকোট জড়িয়ে শাওয়ারে দাঁড়ানোর মতো’। আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট আবার আরেক কাঠি সরেস। অনুবাদ সাহিত্যের সমালোচনা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, কবিতাকে তিনি সংজ্ঞায়িত করেছেন অনুবাদের বিপরীতে রেখে। কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনুবাদ করতে গেলে যেটা হারিয়ে যায়, সেটাই হলো কবিতা।’ তবে এত এত বিরোধিতা সত্ত্বেও কবিতার কিছু কিছু অনুবাদ প্রচেষ্টা সমালোচকের মুখ চুন করে দেয়। সুরেশ রঞ্জন বসাকের ‘বিশ শতকের কবিতা’ নিঃসন্দেহে সেই কাতারে এক নতুন সংযোজন।
‘বিশ শতকের কবিতা’ বইটিতে বিশ্বের ছয় মহাদেশের ১৯৯ জন কবির ২৪৬টি কবিতার অনুবাদ স্থান পেয়েছে। বিগত শতকে পৃথিবী জুড়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, পট-পরিবর্তনের খেলা চলেছে, মানব ইতিহাসে সেটা এক অদৃষ্টপূর্ব ঘটনা। পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধে রক্তাক্ত হয়েছে পৃথিবী, দেখেছে একের পর এক গণহত্যা, বিশ্বাসের পতন, সাম্যের স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গ। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই পড়েছে সেইসব ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব। আবার উপনিবেশবাদ, উত্তর-উপনিবেশবাদ, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতা, কাঠামোবাদ, মনঃসমীক্ষণ – সবই এক দশকের অবদান বলা যায়। কবিতা নির্বাচনের সময় সেই বিষয়গুলোই মাথায় রেখেছেন অনুবাদক। কবিতা তো শুধু সুন্দর ছন্দ এবং উপমার বিষয়-ই নয়, এতে উঠে আসে একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির নানা দিক। শব্দ অনুবাদ সহজ, কিন্তু সংস্কৃতিকে অনুবাদ তো সহজ নয়। তাই ‘বিশ শতকের কবিতা’য় এই অপরিচিতির ভয়কে এমনভাবে অতিক্রম করা হয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুবাদকৃত কবিতাই হয়ে উঠেছে বাঙালি ভাবকাঠামোরই অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।
অনুবাদক, গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক সুরেশ রঞ্জন বসাকের জন্ম চট্টগ্রামে, ১৯৫২ সালে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে দেশে-বিদেশে তাঁর বিশটিরও অধিক মৌলিক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই বর্তমানে সিলেটের মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন তিনি। দেশে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত প্রবন্ধ ও অনুবাদকর্ম ছাড়াও বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনুবাদকর্ম। সুরেশ রঞ্জন বসাকের অনুবাদকর্মগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘এশিয়ার কবিতা’, ‘পাবলো নেরুদার প্রেমের কবিতা’, ‘একশ’ বছরের ইংরেজি কবিতা’, ‘গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের গল্প’, জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’, মার্কেজের ‘একটি অপহরণ সংবাদ’ ইত্যাদি।