বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স
Shahitto-Shankriti-nana-Vabna

সাহিত্য সংস্কৃতি নানা ভাবনা

Price
600 BDT

Published on
July 2013

ISBN
9789849047148

Category


আলী আনোয়ার তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি নানা ভাবনা’ শুরু করেছেন ‘শিল্পের সংজ্ঞা নির্ণয়-সংক্রান্ত সমস্যা’ নামের প্রবন্ধ দিয়ে। কিন্তু শিল্পের সংজ্ঞা নির্ণয় থেকে শুরু করে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান যেটির কথাই বলা হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, পাবলো নেরুদা, ওয়াহিদুল হক, ওরহান পামুক কিংবা শিরিন এবাদি যাঁর কথাই বলা হোক না কেন, সমাজ-প্রক্রিয়াকে বোঝার বিষয়টি  কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে থাকেই। আর সমাজটি যদি হয় বাঙালি সমাজ, তাহলে অনিবার্যভাবেই এসে পড়ে এ-সমাজে পরিবর্তনের প্রেরণা নিয়ে সংঘটিত সামাজিক সংস্কারের প্রসঙ্গ, আসে তেমন সংস্কারের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই পথিকৃৎকে বিংশ শতাব্দীর অনেক চিন্তক-শিক্ষাবিদই নানাভাবে উদ্ঘাটন করেছেন; আলী আনোয়ার করেছেন বিষাদে ছোঁয়া নিঃসঙ্গ বিদ্যাসাগরকে, ব্যক্তির সীমানা উদ্ঘাটন করতে থাকা বিদ্যাসাগরকে।

বাঙালির ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির ভেতর ও বাহিরকে আলী আনোয়ার খুঁজেছেন এর অন্তর্নিহিত গভীরতর রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে। তাই ‘মানুষ একটি সাংস্কৃতিক প্রাণী’ কথাটির বলনে যত সরলতাই থাকুক, তা আর তাঁর বিশ্লেষণে তত সরল থাকেনি, থাকবারও কথা নয়। সমাজে যে বিভাজন রয়েছে, সংস্কৃতি তাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তোলে, এককথায় বলতে গেলে, সংস্কৃতি সম্পর্কে এই হলো আলী আনোয়ারের গভীরতর অবলোকন এবং যার গূঢ়ার্থ গভীরভাবে রাজনৈতিক, কেননা তাতে বিভাজনের প্রশ্ন জড়িত।

সাংস্কৃতিক বলপ্রয়োগের ধারণার মধ্যে দিয়ে এগোতে এগোতে আলী আনোয়ার পৌঁছেছেন উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের ভেতর। ওই উৎকণ্ঠাই যেন ছায়া ফেলেছে ‘সংস্কৃতির কাঠামো ও তার নিয়ন্ত্রণ’ লেখাটিতে, ‘সাহিত্য ও রাজনীতি’তে এবং এ-উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ একটি সামগ্রিক রূপ পেয়েছে ‘উপদ্রুত মানুষ ও অসহায় মানবতাবাদ’ লেখাটিতে। এ-লেখাতে প্রসঙ্গক্রমে এসেছে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিহেভিয়ারিস্ট মনস্তাত্ত্বিক স্ট্যানলি মিলগ্রামের একটি গবেষণার কথা, যেটির বিষয় ছিল কর্তৃত্বের প্রতি আস্থা, বিশ্বাসপ্রবণতা ও আনুগত্যপ্রবণতার মাত্রা নিরীক্ষণ করা। এই গবেষণার ফলাফলের মধ্যে দিয়ে মানুষের প্রকৃতিই আলী আনোয়ারের কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে, প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো এবং উৎপাদান ও বিপণনের বিন্যাস। এবং তিনি নিঃসংশয়ের সঙ্গে লিখেছেন, রাষ্ট্র পশুশক্তিকে আড়ালই করতে চায়, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে দরকারও হয় পশুশক্তির। ক্ষমতার ব্যবহার বিচ্ছুরিত হয় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এবং আলী আনোয়ার দেখেছেন বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশও প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। তার কারণ বৃহৎ পুঁজি এখন বিজ্ঞানের অধিকার দাবি করছে, সনাতন সমাজের প্রাচীন বিজ্ঞানচর্চা থেকে আধুনিক সমাজের বিজ্ঞানচর্চা আলাদা হয়ে গেছে আর রাষ্ট্রও এখন বিজ্ঞানচর্চার প্রভুত্বের অন্যতম দাবিদার। যুক্তির প্রযুক্তিতে রূপান্তরপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতেই এবং এখন সে-প্রক্রিয়া চরম শিখরে পৌঁছেছে। বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্কতা সম্পর্কে তাঁর অন্য লেখাগুলি থেকে ‘উপদ্রুত মানুষ ও অসহায় মানবতাবাদ’ সংক্রান্ত লেখাটি একেবারেই আলাদা হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র ও মানবসমাজের প্রসঙ্গ যুক্ত হওয়ায়, মানুষের প্রকৃতি ও প্রবৃত্তির আলোচনা উঠে আসায়। রাষ্ট্র ও মানবসমাজকে তিনি দেখেছেন বিপরীতমুখী দুটি প্রত্যয় হিসেবে। গভীরতর অর্থে দেখতে গেলে আলী আনোয়ার বোধকরি ‘একমাত্র রাষ্ট্রকে’ই কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি। তিনি মানুষকেও কাটাছেঁড়া করেছেন। মানুষের খ-িত চৈতন্য, অন্ধবিশ্বাস ও মূঢ়তা আর পাশবিকতা কীভাবে সভ্যতার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে তাও তিনি অনুভবের চেষ্টা করেছেন। এবং বলেছেন, ‘মানুষের বিকার, ধ্বংস, বিনষ্টির ইতিহাসের দিকে তাকালে প্রগতিতে বিশ্বাস স্খলিত হয়ে পড়ে।’ আশার কথা, তিনি এও বলেছেন, ‘প্রগতিতে বিশ্বাস হলো মানুষের আত্মিক প্রবণতা।’



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *