
রক্তের অক্ষর
লেখকঃ রিজিয়া রহমান
প্রথম প্রকাশ : জুন ১৯৭৮
মূল্য : ২২৫ টাকা
সমাজের একেবারে নিম্নবর্গীয় মানুষকে কেন্দ্র করে সাহিত্য রচনার চল কম নয়। কিন্তু রিজিয়া রহমান তাঁর ‘রক্তের অক্ষর’-এ যে রোমান্টিকতাবর্জিত বাস্তব চিত্র তুলে এনেছেন, তাঁর নজির বিরল। তবে তাতে সাহিত্যগুণে ভাটা পড়েনি কোথাও। বাঙালির ক্ষুধা, আর্তি, সমাজের নিচুতলার আঁধার, দেহোপজীবিনীর সংগ্রাম, প্রতিদিনকার পরাজয় সবমিলিয়েই গড়ে উঠেছে ‘রক্তের অক্ষর’। বইটি যখন প্রকাশিত হয়, রিজিয়া রহমান তখন অধ্যাপনায় জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি সেখানে ডাইরেক্ট যেতে পারিনি এবং নিজের চোখে দেখতে পারিনি। তার মানে এই নয় যে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি যে ইনফরমেশন ও উপাত্তগুলো জোগাড় করেছিলাম, সেগুলো সবই বাস্তব ছিল। …আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধু ছিল, যারা বিভিন্ন তথ্য এনে দিত। এক ভদ্রলোক, যে আমার চেয়ে বয়সে ছোট ও আমাকে সবকিছু এনে দিত, যা যা আমি বলতাম।’
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে যে কয়জন নারী সাহিত্যিক উপন্যাস রচনার গুরুভার কাঁধে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন, তাঁদের একজন রিজিয়া রহমান। গত ছয় দশক ধরে ছোটগল্প, উপন্যাস, কবিতা এবং শিশুসাহিত্যে তাঁর অবাধ বিচরণ। ১৯৩৯ সালে কলকাতার ভবানীপুরে জন্ম রিজিয়া রহমানের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করার পর অধ্যাপনায় যোগ দেন তিনি। তারপর থেকেই সাহিত্য রচনায় নিবেদন করেছেন নিজেকে। তাঁর লেখালেখির সূচনা কবিতা দিয়ে, তবে এ পর্যন্ত কোনো কাব্যগ্রন্থ বেরোয়নি তাঁর। রিজিয়া রহমানের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থের নাম ‘অগ্নি স্বাক্ষরা’। তাঁর সাহিত্যকর্মের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, সমাজের নিচুতলার মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা, ক্লেশ ও ক্লেদের কথা। এছাড়া ঔপনিবেশিক পৃথিবীতে স্বাধীনতাবঞ্চিত মানুষের দুর্দশা এবং তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও তাঁর রচনায় ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক, কবি জসিমউদদীন সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, সা’দত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ও নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক। রিজিয়া রহমানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘বং থেকে বাংলা’, ‘একাল চিরকাল’, ‘সূর্য সবুজ রক্ত’, ‘আবে রাঁও’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘শিলায় শিলায় আগুন’, ‘অলিখিত উপাখ্যান’ প্রভৃতি।