
শ্রোতার কৈফিয়ত
সাহিত্যের একটা অংশ জুড়ে আছে গান। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার তুলনায় গান বরং একটু বেশিই গণমুখী। আবদুশ শাকুরের কথা ধার করে বলতে হয়, ‘সবাই সাহিত্য পড়ে না, কিন্তু সংগীত সকলে শোনে। নিজের হৃদয়ের গভীরতম কথাটি সংগীতে তুলে আনেন শিল্পী। কাজটি তিনি করেন শ্রোতার জন্যে। শ্রোতা শিল্পীর বেদনাতে নিজেকে আচ্ছন্ন করেন, আর তাতে সংগীত পায় সার্থকতা। অর্থাৎ সংগীতের নির্মাণ শিল্পী এবং শ্রোতার মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদানেরই ফল।’ ‘শ্রোতার কৈফিয়ত’-এ শ্রোতার পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়ার কাজটি করেছেন আবদুশ শাকুর। সংগীতের যত ধারার সংস্পর্শে তিনি এসেছেন, যা তাঁকে আলোড়িত করেছে, তা নিয়েই লিখেছেন এই বইয়ে। জীবনের বিভিন্ন সময়ে লেখা সংগীতবিষয়ক ১৪টি প্রবন্ধের সংকলন এই বই।
‘শ্রোতার কৈফিয়ত’-এর ১৪টি প্রবন্ধের মধ্যে ৬টিতেই উপমহাদেশের কালজয়ী সংগীতজ্ঞদের জীবন এবং কর্ম নিয়ে আলোচনা উঠে এসেছে। এঁদের মধ্যে আছেন – মিয়া তানসেন, পঙ্কজকুমার মল্লিক, পণ্ডিত ভি. বালসারা, শচীন দেববর্মন, নওশাদ আলী, কাজী নজরুল ইসলাম। বাদ যাননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। শুধু রবীন্দ্রনাথই নন, তাঁর সৃষ্টিকর্মের ওপর যাঁরা কর্তৃত্ব আরোপের চেষ্টা করেন, নিজেদের মতো ছকে বাঁধার চেষ্টা করেন, শাকুরের ভাষায়, বিশ্বভারতীর মতো সেই ‘রবীন্দ্ররক্ষী বাহিনী’দেরও অনাবশ্যকতাকে তুলে এনেছেন এ গ্রন্থে। প্রশ্ন করেছেন, ‘ইন্টারপ্রেশনের স্বাধীনতা রবীন্দ্রকাব্যের ক্ষতি করতে না পারলে, রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষতি করবে কেনো?’
প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যিক আবদুশ শাকুরের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নোয়াখালি জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য ভ্রমণ করেন নেদারল্যান্ডস। কর্মজীবন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীকালে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ২০ বছর বয়সে ১৯৬১ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ক্ষীয়মাণ’ দিয়ে সাহিত্যজীবনের শুরু। তাঁর রচিত গল্পের সংকলন ‘গল্পসংগ্রহ’ বাংলা সাহিত্যে তাঁকে এক দীর্ঘস্থায়ী আসন দিয়েছে। গল্প এবং প্রবন্ধ ছাড়াও উপন্যাসে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন আবদুশ শাকুর। এছাড়া ‘গোলাপসংগ্রহ’ নামে বাংলা সাহিত্যে প্রথম গোলাপবিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধের সংকলন বের করেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আবদুশ শাকুর ২০১৩ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাহিত্য এবং শিল্পের অন্যান্য শাখায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।