
প্রাবন্ধিকঃ সনৎকুমার সাহা
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১২
মূল্য : ৩৭৫ টাকা
বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এমন কোনো সময় বের করা যাবে না যখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা বন্ধ ছিল। ব্রিটিশ বাংলায় বাঙালি হিসেবে গর্বের জায়গা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথ হয়ে দাঁড়ালেন জাতিগত পরিচয় প্রতিষ্ঠার বিশেষ হাতিয়ার। ২০১০ সালে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নোবেলজয়ী গ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’র শতবছর পূর্তি হয়। ২০১০ সালে উদযাপিত হয় কবির সার্ধশতজন্মবার্ষিকী। একবিংশ শতাব্দীর রবীন্দ্রচর্চা, রবীন্দ্র-বিরোধিতা, রবীন্দ্র মূল্যায়ন ইত্যাদির হালচাল নিয়েই গড়ে উঠেছে সনৎকুমার সাহার প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘ফিরে দেখা : রবীন্দ্রনাথ’।
বইয়ের বারোটি প্রবন্ধের মধ্যে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম এবং মানসজগতের নানা দিক। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের ভাষা নিয়ে, রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্মে ধ্রুপদী সংস্কৃত কবি কালিদাসের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিশ্লেষণ করা হয়েছে চিত্রকর হিসেবে রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার ব্যাপ্তি।
কবি এবং সংগীতজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ যেভাবে উঠে এসেছেন সনৎকুমার সাহার প্রবন্ধে, তেমনি উঠে এসেছে মানবমুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনার জায়গাগুলোও। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতি অন্যান্য ভারি বুলি যখন আয়, আমদানি-রপ্তানি উন্নয়নের দাঁড়িপাল্লায় উন্নতি মাপতে ব্যস্ত, তখন রবীন্দ্রজগতে মানুষের উঠে দাঁড়াবার, বিকাশ লাভের জায়গাগুলোকে নিয়ে এসে নতুন মানদণ্ড তৈরির প্রয়াস পেয়েছেন সনৎকুমার সাহা। কেবল মাথাপিছু আয় এবং জিডিপিই নয়, মানুষ হিসেবে আত্মার উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে সনৎকুমার লিখেছেন, ‘মানুষের মুক্তি ও সক্ষমতার কথা রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন শিক্ষা ও উন্নয়নকে সমলয়ে রেখে। শিক্ষা তাঁর কাছে শুধুই ছকে ফেলা খণ্ড খণ্ড বিদ্যাচর্চার বিষয় ছিল না। তা ছিল পরিপূর্ণতার উপলব্ধির এক সাধনা।’ এছাড়া ‘সমাজদর্শন ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সমাজ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের একান্ত নিজস্ব কোনো দর্শন আদৌ আছে কি না, তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করেছেন। একদিকে বন্ধনহীন ব্যক্তি মানুষ এবং অন্যদিকে স্তরীভূত সমাজ কাঠামোর অধীন ব্যক্তি মানুষের সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন, তা এসেছে এই প্রবন্ধে।
দেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে রবীন্দ্রপ্রেমীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। সনৎকুমার সাহা তাঁদেরই একজন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক। প্রবন্ধ রচনায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ এবং শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য ২০১৫ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। ‘সমাজ সংসার কলরব’ তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ।