
আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম
‘আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম।’ কবি মারুফুল ইসলামের একটি কবিতার বই। বইটি বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে। ৭২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে কবিতা আছে ৬৩টি। বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৩০ টাকা। এবং প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
মারুফুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত।তিনি মূলত কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও সমালোচনা লেখেন। তাঁর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
মারুফুল ইসলাম কবিতা লিখলেও তার মধ্যে সমালোচক সত্তা আছে। যা আলোচ্য বইয়ের কবিতাগুলি পড়লে বোঝা যায়। তিনি কবিতাগুলোকে তার সমালোচক সত্তায় বিচার করেছেন। কবিতাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন আর প্রত্যেকটি বিষয়েরই বিভিন্ন দিক রয়েছে। অসামর্থ্য ও অর্জন দুটি বিপরীত দিক তার কবিতায় অসাধারণভাবে উঠে এসেছে। তার নিজস্ব জগৎ ও তার চিন্তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে কবিতায়। তার কবিতা কখনো কষাঘাতের মতো আমাদের পিঠের ওপর পড়ে, কখনো শিহরণের মতো আমাদের অনুভূতি হয় কখনো বা বিষ্ময়, বেদনায় আমরা আক্রান্ত হই।
কবিতাগুলি পড়ে মনে হলো কবি যেনো এইখানে নিগূঢ় আনন্দ, প্রেম, যন্ত্রণা, স্মৃতিকথাই বর্ণনা করেছেন। সবকিছু ছাপিয়ে তার কবিতায় সচেতন ও অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে ধরা দেয় চিরচেনা পরিমণ্ডল। অভিজ্ঞতার চিহ্নায়ন, উপস্থাপনার নতুনত্বে বহুমাত্রিক চিত্র এবং ভাবে পূর্ণ কবিতা সমকালীন কবিতায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
যেকোনো অনুভূতিকে তিনি কবিতা করে তুলতে পারেন, তার কবিতা পাঠ করে অন্তত তাই-ই মনে হয়। আর তার এই অনুভূতি এতোটাই সৎ, সরল এবং অতল যে, তার প্রকাশও স্বচ্ছ, সাবলীল এবং ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠে। যেমন তিনি তার ‘ও পাহাড়, ও আনন্দ’ কবিতায় বলছেন, ‘ও পাহাড়, ও আনন্দ/ তুমি কেন বিষাদের বৃক্ষ বুকে ধরো/নিশান্তে জোটে না পান্তা/উপবাসী সূর্য মরে অস্তাচলে…।’
আর কেমন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কবিতা লিখতে হয়ে এই কবি তা ভালোই জানেন। প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক ব্যঞ্জনাময় বাক্য তিনি সহজেই লিখতে পারেন। এবং তিনি প্রকাশ-প্রকারেও আনকোরা। এই দুইয়ের মধ্যে তাল তিনি অনেকটাই রক্ষা করতে জানেন। ব্যঞ্জনা ও প্রকাশ-প্রকারে তাল রাখতে না পারলে কেবল মেকি প্রকরণে কবিতার যথার্থতা নেই।
কবিতায় লিরিক এর ব্যবহারে এই কবি বরাবরই সিদ্ধহস্ত। ফলত তার কবিতাপাঠে একঘেয়েমি তৈরি হয় না পাঠকের। এই কবির কিছু কবিতা পাঠককে কখনো-সখনো এলোমেলো ভাবনার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বলা যায়, এই কবির অনেক কবিতাই শিল্পোত্তীর্ণ।