
দুটি উপন্যাস
‘নাসরীন জাহানের দুটি উপন্যাস’। মূলত পূর্বে প্রকাশিত দুটি ছোটো উপন্যাসকে এক মলাটে আবার প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশনস। উপন্যাস দুটির একটি হলো ‘চন্দ্রের প্রথম কলা’ আর দ্বিতীয়টি ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার।’
নাসরীন জাহানের জন্ম ১৯৬৪ সালে। আশির দশকের শুরু থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। প্রথম উপন্যাস ‘উড়ুক্কু’র মাধ্যমে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এই উপন্যাসের জন্য লাভ করেন ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
‘নাসরীন জাহানের দুটি উপন্যাস’ বইটিতে গ্রন্থিত ‘চন্দ্রের প্রথম কলা’ নাসরীন জাহানের দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রকৃত প্রস্তাবে এই উপন্যাসেই লেখকের একটি ভিন্নজগৎ পরিদৃষ্ট হয় পাঠকের কাছে। জীবন্ত বাস্তবকে চেতন-অচেতনের দৃশ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে দক্ষ যে-নাসরিনকে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘উড়ুক্কু’তে আমরা দেখেছিলাম তার কাছে স্বপ্নলোক এখন প্রধান অবলম্বন। রূপকথার ধরনে কাহিনী নির্মাণে তিনি অগ্রসর হন। সেখানে বাস্তব এলেও তা পাঠকের কাছে চমক দিতে না দিতেই পাঠক আবার ডুবে যান স্বপ্নলোকে ভ্রমণ পরিক্রমায়।
‘চন্দ্রের প্রথম কলা’ উপন্যাসে রূপকথার যে আবহ তৈরি হয় তার পাশাপাশি প্রবহমান থাকে আরও একটি ঘটনাস্রোত, যার কেন্দ্রতে থাকেন এক লেখক এবং তার পারিপার্শ্ব এবং তা জীবন্ত বাস্তবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেই স্থাপিত।
এরপর আসে ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার’। এটা নাসরীন জাহানের তৃতীয় উপন্যাস। প্রথম পুরুষের বর্ণনায় রচিত উপন্যাসিকা ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার’। শুরুতেই লেখক কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রলেখা সম্পর্কে জানিয়ে দেন। বোঝা যায় যে, লেখক চন্দ্রলেখাকে নিয়ে একটি গল্প বলতে যাচ্ছেন এবং সে গল্পটি রূপকথার মতো এক আবহ দিয়ে শুরু হচ্ছে। রূপকথার এ ধরনটি উপন্যাসজুড়েই বর্তমান, কোথাও কোথাও তার তীব্রতা বেশি। সেখান থেকে মাঝেমাঝে মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশে এরশাদ-পরবর্তী সময়ে ফিরে আসেন লেখক। নতুন নতুন প্রতীকী অর্থ লাভ করে চরিত্র এবং ঘটনাগুলি। চন্দ্রলেখার মৃত্যুর ভেতর দিয়ে সমাপ্তি ঘটে উপন্যাসের। হালকা তুলির এক আঁচড় সেগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্তি ঘটালেও সেগুলো নিজ নিজ প্রেক্ষিতে নতুন নতুন অর্থবহতায় উজ্জ্বল।
রূপকথার ধরনে উপাখ্যান নির্মাণে নাসরীন তাঁর চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছান ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার’-এ যেখানে স্বাভাবিক জীবনচিত্র কোনোক্রমেই রূপকথার রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্নযোগ্য নয়। অলৌকিক এক গল্প কাঠামোয় বাক্য বা বাক্যাংশ দিয়ে, কখনও বা ক্ষুদ্র আখ্যান দিয়ে পার্থিব বাস্তবকে একাকার করে দেয়া হয় কল্পলোকের সম্ভাব্যতার সঙ্গে।
বাস্তবতাকে অলৌকিকের আবরণে পরিবেশেনের বিষয়ে তিনি ‘চন্দ্রের প্রথম কলা’র চেয়ে ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার’ উপন্যাসে অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন।