বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলার নারী

Price
440 BDT

Published on
February 2017

ISBN
9789849256908

Category


বিজ্ঞানী, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক পূরবী বসু এই গবেষণাধর্মী বইটি শুরু করেছেন হুমায়ুন আজাদের একটি দীর্ঘ উদ্ধৃতি দিয়ে- ‘নারীকে শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বলা যায় না নারী অশিক্ষিত। তাকে বিজ্ঞান থেকে বহিষ্কার করে বলা যায় না নারী বিজ্ঞানের অনুপযুক্ত। তাকে শাসনকর্ম থেকে নির্বাসিত করে বলা যায় না নারী শাসনের যোগ্যতাহীন। নারীর কোনো সহজাত অযোগ্যতা নেই, তার সমস্ত অযোগ্যতাই পরিস্থিতিগত, যা পুরুষের সৃষ্টি বা সুপরিকল্পিত এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’ এই উদ্ধৃতিটিই পুরো গ্রন্থের মূল প্রবণতাকে বহন করছে। বাংলার প্রেক্ষাপটে নারীর এই অবদমিত অবস্থা বা অধস্তনতার স্বরূপ উন্মোচন, এবং সেই অবদমন-অধস্তনতার বিরুদ্ধাচারণ করে বাংলার নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক সংগ্রামের একটি প্রামাণ্য বিবরণ উপস্থাপনই এই গবেষণা গ্রন্থের মুখ্য উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মোটা দাগে গ্রন্থটির আধেয়ের দুইটি অংশ- বাংলার প্রেক্ষাপটে নারীর অধস্তনতার ইতিহাস ও প্রামাণ্য বিবরণ উপস্থাপন এবং বাংলার নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের স্বরূপ বিশ্লেষণ। পূরবী বসু অবশ্য তাঁর গ্রন্থটিকে এমন খটোমটো বিন্যাসে বিন্যস্ত করেননি। তিনি বরং নারীর এই সামাজিক যাত্রার একটা কালিক বিভাজনকে ভিত্তি করে এই বিবরণ উপস্থাপন করেছেন। নারীর অবস্থা নিরূপণের জন্য তিনি তিনটি হাতিয়ারের উল্লেখ করেছেন- ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্য। কিন্তু বাংলার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিবরণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাহিত্যে নারীর উপস্থাপন। এই কালিক বিভাজনটিও তিনি সাহিত্যকে ভিত্তি করেই করেছেন- ‘প্রাচীন বাংলার নারী’, ‘মধ্যযুগের নারী’ ও ‘আধুনিক যুগের নারী’।
অবশ্য তাঁর আলোচনায় প্রাচীন যুগ শুরু হয়েছে বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগেরও বহু আগে। তিনি আলোচনা শুরু করেছেন প্রাক-আর্য যুগ থেকে। দেখিয়েছেন, প্রাক-আর্য যুগে বাংলার নারীরা ঠিক স্বাধীন বা আত্মনির্ভরশীল না হলেও আর্য যুগের তুলনায় অনেক বেশি অধিকারের অধিকারী ছিল। কিন্তু আর্যদের আগমনের পর থেকে, বাংলার নারীদের অধিকার লুপ্ত হতে শুরু করে। তারা কেবল পুরুষদের মনোরঞ্জন এবং তাদের পুত্রসন্তান গর্ভে ধারণের উপকরণে পরিণত হলো। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের এই অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করে চলেছে পুরো প্রাচীন ও মধ্যযুগ অবধি; এমনকি এই প্রচেষ্টা কম-বেশি চলছে এখনো। প্রাচীন যুগে ধীরে ধীরে এই অবরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে, বলবৎ থেকেছে পুরো মধ্যযুগ জুড়েই।
এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে আধুনিক যুগে এসে। সে পরিবর্তনও যে খুব সন্তোষজনক গতিতে বা পদ্ধতিতে ঘটছে, তা নয়। এমনকি এখনো নারীমুক্তির বা নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পথ যথেষ্ট কণ্টকাকীর্ণ। এখনো বাংলার সমাজ নারীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ঠিক উৎসাহী নয়। তবে যেহেতু বাঙালি তথা বাংলার সমাজ এটা বুঝতে পেরেছে যে, তাকে সামনের দিকে দ্রুতগতিতে ধাবিত হতে হবে, কাজেই তাকে বাধ্য হয়ে অন্তত বাহ্যিকভাবে বা ভদ্রতার খাতিরে হলেও নারীকে মর্যাদার আসনে বসাতে হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য রক্তদানের পর, অগ্রযাত্রার পথ থেকে বাঙালির বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই জাতীয় উদ্বোধনের পথ ধরেই বাংলার সমাজে নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামও এক নতুন মাত্রা পায়। আর সে পথ ধরে, শম্বুক গতিতে হলেও, ঘুরে চলেছে বাংলার নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের রথের চাকা।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *