বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স
Amar Dinguli by Susmita Islam

আমার দিনগুলি

Price
450 BDT

Published on
April 2014

ISBN
9789849049739

Category


একজন মানুষকে যে একজীবনে কত কষ্ট সইতে হয়, কত আনন্দের ভার বইতে হয়, জীবন যে কত আলোর রেখায় রঙিন  হতে পারে, পাশাপাশি ঘাত-প্রতিঘাতের চড়াই-উতরাইয়ে হতে পারে কত খ-ে চূর্ণ-বিচূর্ণ; জীবনের শেষবেলায় এসে আমরা কজন মানুষ পারি নির্মোহভাবে সেসব সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে, কজন মানুষ পারি নির্লিপ্তভাবে সেই জীবনটিকে গভীর উপলব্ধি আর বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি দার্শনিক সত্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে যে, ‘আমি ভালোই আছি?’ সেই দুর্লভ মানুষদেরই একজন সুস্মিতা ইসলাম, যাঁর আত্মজীবনীগ্রন্থ ‘আমার দিনগুলি’ শুধু তাঁর নিজের জীবনের মহাকাব্যিক আখ্যানই নয়, ব্রিটিশ-ভারত, ভারত-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই তিনটি দেশ এবং তিনটি যুগের যেন চলমান কালছবিও।

সুস্মিতা ইসলামের জন্ম ১৯২৬ সালের বিভাগপূর্ব কলকাতার এক বনেদি পরিবারে। বাবা ত্রিদিবনাথ রায় ছিলেন খ্যাতিমান আইনজীবী, সংস্কৃত সাহিত্যে প-িত, মধ্যযুগবিষয়ক গবেষক। পিতামহ নিখিলনাথ রায় ছিলেন যশস্বী ঐতিহাসিক। মা কল্যাণী রায় কবি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। স্বভাবতই তাঁর এই আত্মজীবনীগ্রন্থে তৎকালীন কলকাতার একটি বিকাশমান বনেদি সমাজের ছবি উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে আলোক কিরণের মতো প্রস্ফুটিত হয়েছে হিন্দু-মুসলিম নানা দ্বিধাভাজন চড়াই-উতরাই সম্পর্কের মধ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত মানবিক ধর্ম কীভাবে জয়লাভ করেছে, তেমন এক গাঁথাও।

সুস্মিতা ইসলামদের পারিবারিক পরিচয় তো আগেই জানানো হয়েছে, এবার ক্যাপ্টেন মুস্তাফা আনোয়ারের পরিচয়ও জানানো যাক। তিনি ‘বিশ্বনবী’ বইয়ের লেখক কবি গোলাম মুস্তাফার বড় ছেলে। আগেই বলেছি, এটি কোনো সাধারণ আত্মজীবনীগ্রন্থ নয়, এতে রয়েছে মহাকাব্যের আকর, রয়েছে বীরোচিত নায়কের অস্তিত্ব। তাই কোনো কপটতা নয়, নয় চিত্তের দৌর্বল্য প্রদর্শন, ক্যাপ্টেন আনোয়ার রেখার (সুস্মিতা ইসলাম) উপস্থিতিতেই একদিন ওর মায়ের কাছে সোজা এবং দৃঢ় কণ্ঠে জানালেন, তিনি রেখাকে বিয়ে করতে চান। প্রাথমিক সংকোচ এবং বিহ্বলতা কাটিয়ে বাবা-মায়ের সম্মতিক্রমেই বিয়েটা হয়ে গেল। অবশ্য এর জন্য এই পরিবারটিকে সমাজ এবং আত্মীয়দের কাছে কম মূল্য দিতে হয়নি; দু’পক্ষের পরিবার থেকেই। সুস্মিতা ইসলাম সেসব কথা অতি সূক্ষ্ম এবং নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন।

১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ-পূর্ববর্তী দাঙ্গাসহ রাজনৈতিক-সামাজিক সব ঘটনাগুলোই তাদের ব্যক্তিজীবনকেও প্রভাবিত করেছিল, সুস্মিতা ইসলাম সেই ধারাবাহিকতায় ভারত ভাগ হওয়ায় তাদের জীবনে যে ক্ষতটুকু লেগেছিল, তারও যে বর্ণনা দিয়েছেন, ইতিহাসে সেরকম বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদিক থেকে দেশভাগের যন্ত্রণার ক্ষরণ এখানে অন্তঃসারসহ উন্মোচিত হয়েছে। ১৪ আগস্ট করাচিতে প্লেনক্র্যাশে নিহত হলেন ক্যাপ্টেন আনোয়ার আর পুরো জীবনেরই বাঁক বদলে গেল সুস্মিতা ইসলামের। জীবনের এই নতুন পর্ব থেকেই তাঁর চরিত্রের নিঃসঙ্গতা পরিবৃত যেমন শোকাবহ জীবনের ছবি পাই, তেমনি দৃঢ়তা অনমনীয়তা এবং আত্মসম্মান নিয়ে জীবনকে উতরে যাওয়ার সংগ্রামী প্রতিচ্ছবিও পাই। যা অনুকরণীয় তো বটেই, দৃষ্টান্তযোগ্যও।

‘আমার দিনগুলি’র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সুখ ও দুঃখের ভেলায় চেপে তিনি যে-সময়টাকে অতিক্রম করেছেন, তাকেও বিশ্বস্তভাবে রূপায়ণ করতে পেরেছেন। দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতায় তাদের হিন্দুপাড়ায় যেমন ক্যাপ্টেন মুস্তাফা আনোয়ারের থাকাটা ঠিক নয়, তেমনি ক্যাপ্টেন আনোয়ারের বাড়িতেও একই পরিস্থিতিতে বাইরের বারান্দায় সুস্মিতা ইসলাম এলেই রাগ করতেন ক্যাপ্টেন আনোয়ার, বাইরের মুসলমান মিছিলের লোকরা বুঝি সুস্মিতা ইসলামকে দেখে ফেলে! এভাবেই সময় আসে, ইতিহাস আসে ধারাবাহিকভাবেই, আসে একাত্তরের ভয়াল দিনগুলো, সেই বিভীষিকাময় সময়ে একা মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকায় জীবনযাপন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞ, ট্রাকবোঝাই করে বধ্যভূমিতে হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছেন, নিজেও সম্মুখীন হয়েছেন পাক টিকটিকিদের, জীবন বিপন্নতায় কেটেছে প্রতি মুহূর্তে, সেই অগ্নিগর্ভ সময়েই মেয়েকে নিয়ে করাচি বিমানবন্দর হয়ে আমেরিকা যাওয়ার বর্ণনাটা সত্যিই রুদ্ধশ্বাসময়। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর স্বাধীন বাংলাদেশে এসেও আহত হয়েছে তার সত্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোখের সামনে ভাইস চ্যান্সেলরকে অপমানিত হতে দেখে! আন্দোলনের নামে ছাত্র নামধারীদের নৈরাজ্য অথবা স্বাধীনতার মূল্যবোধ দ্রুত হারানোর ফলে সৃষ্ট দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনিও, পাকিস্তানিদের কাছে নয় এদেশের মানুষের কাছেই হারিয়েছেন সাভারের প্রিয় এক টুকরো জমি! তবু হাহাকার নয়, যন্ত্রণা নয় শেষাবধি জীবন আর জীবনের আনন্দই তার কাছে ধরা পড়েছে অতি আদরে!



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *