ফৌজিয়া রেখা
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারী ২০১৭
মূল্য : ৪০০ টাকা
‘উপলব্ধি।’ কথাসাহিত্যিক ফৌজিয়া রেখার লেখা উপন্যাস। ২০১৭ সালে বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড। বইটির একটি সুন্দর মনোজ্ঞ প্রচ্ছদ করেছেন গ্রন্থকারের কন্যা রুমানা ফৌজিয়া। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৬।
ফৌজিয়া রেখার জন্ম ষাটের দশকে নীলফামারীতে। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার। পেশাগত জীবনে একজন ডাক্তার হয়েও যে তিনি দিনের একটা লেখালেখির ভিতরেই ডুবে থাকেন তা তার লেখা পড়লেই আমরা বুঝতে পারি।
‘উপলব্ধি’ ফৌজিয়া রেখার দ্বিতীয় উপন্যাস। তার প্রথম উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ ভাবনা’র পরে অর্থবহ ভাবনা নিয়ে লিখেছেন তিনি এই দ্বিতীয় উপন্যাস৷ বইটির অন্তর্নিহীত অর্থ, বাক্যবিন্যাস এবং সর্বোপরি উপভোগ্য৷ তথাকথিত আধুনিকতার আবরণে আচ্ছাদিত প্রাচীন ধ্যান-ধারণায় পরিপুষ্ট সমাজের ভিতরে থেকেও প্রকৃত আধুনিক চরিত্র এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিত্বের অনন্য সমাবেশিত বিন্যাস ঘটেছে আখ্যানের দুইটি প্রধান নারী চরিত্রে। এই দুটি চরিত্রের মাধ্যমে নারীর ব্যক্তিসত্তার মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার চিত্র রূপায়িত হয়েছে।
উপন্যাসটা শুরু হয় নাইমা নামের এক নারী চরিত্রের সঙ্গে এক অপরিচিত লোকের অকারণ ফোনালাপ দিয়ে। ফোনালাপ থেকে জানা যায়, ভদ্রলোক পেশায় একজন অধ্যাপক। পরের অধ্যায়ে আমরা পেয়ে যাই রোশনী নামের আরেক চরিত্র।
একটি সার্থক উপন্যাস হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে লেখকের সুপরিকল্পিত ও দক্ষ হাতের গাঁথুনি সবার আগে প্রয়োজন, এবং তারই মধ্যে ফুটে ওঠে মনোজগতের নানা খেলা। যেন-তেনভাবে কাহিনি এগিয়ে নেওয়া একরকম, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক দিককে যথার্থভাবে রূপায়ন করা অবশ্যই ভিন্নরকম। প্রকৃত প্রতিভাবান কথাশিল্পীর প্রয়োজন হয় দ্বিতীয়টির জন্য। স্থান-কালের যথার্থ উল্লেখ, বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টি রাখা, পাঠকের মনের গভীর স্পর্শ করার ক্ষমতা ইত্যাদি দরকার একটি সার্থক উপন্যাসের জন্য। উপন্যাসকে অবশ্যই লক্ষাভিসারী হতে হয়। একটি উপন্যাস শুধুই প্রেমের উপন্যাস, না কি সমাজ ও রাজনীতিপ্রধান উপন্যাস, না কি কোনো ঐতিহাসিক কাহিনিনির্ভর উপন্যাস—তা স্পষ্টত নির্দিষ্ট করে নিতে হয় লেখককে। সেক্ষেত্রে আলোচ্য উপন্যাসের লেখক ফৌজিয়া রেখাকে সার্থক কথাশিল্পী বলেই মনে হয়।
নাইমা ও রোশনী দুইজন পরস্পরের বাল্যবন্ধু। এবং উপন্যাসে এই দুজনেই পরিণত বয়স্ক। দুজনেই সংসারি। এবং পরস্পরের আনন্দবেদনার কথা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে নিয়মিত। দুজনেই চেষ্টা করেছে প্রচলিত প্রথাকে ভেঙে নিজেদের চারপাশের গণ্ডি অতিক্রম করে বেরিয়ে যেতে। নিজেদের বিচার-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেরাই। এইখানে যথাযথ উপলব্ধির মাধ্যমে দুজনের মনস্তত্ত্ব, নারীবাদী চিন্তা মিলেমিশে একই সূত্রে মিশে। মূলত নাইমা আর রোশনী নামের এই দুই নারীকে ঘিরেই আবর্তিত এবং পরিসমাপ্ত হয় উপন্যাসের কাহিনি।