
একুশ থেকে একাত্তর
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বলা যায় বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য ধারার সূত্রপাত হিসেবে। সেইদিন যে ধারার সূত্রপাত হয়, ১৯ বছরের মাথায় সেই ধারাই পরিপুষ্ট হয়ে রূপ নেয় জাতীয়তাবাদী ধারণার স্রোতে, জন্ম দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের। একুশ ফেব্রুয়ারি যে অফুরান ধারার সূত্রপাত, তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন আহমদ রফিক। একুশ থেকে একাত্তর এবং তার পরে এ থেকে সৃষ্ট প্রতিটি পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন করেছেন তিনি ‘একুশ থেকে একাত্তর’ গ্রন্থে।
বইটিতে বিভিন্ন সময়ে লেখা আহমদ রফিকের ২৭টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। ‘একুশ থেকে একাত্তর’ একজন ভাষাশহীদের নস্টালজিয়া আক্রান্ত স্মৃতিচারণ নয়। প্রতিটি প্রবন্ধে লেখক যুক্তির ক্ষুরধারে মাপতে চেষ্টা করেছেন ঠিক কোন ধরনের সামাজিক কারণে ভাষাকে কেন্দ্র করে এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সম্ভব হলো, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বর্ণনা করেছেন ঘটনাপ্রবাহ, মূল্যায়ন করেছেন পরবর্তী ফলগুলোকে। বইয়ের প্রথম প্রবন্ধ ‘একুশ নিয়ে ইতি-নেতির পাঁচকাহন’-এ লেখক বলছেন, ‘…একুশের জন্য একটি বড় নেতিবাচক দিক হলো এর জনবিচ্ছিন্নতা। ভাষা আন্দোলনের সূচনা যদিও বাঙালি শিক্ষিত সন্তানদের হাত ধরে, এর সাফল্যের ভিত গড়ে উঠেছিল জনসংশ্লিষ্টতায় এবং গণআন্দোলনের শক্তিতে। ….একুশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের, আর নিম্নবর্গীয়দের তো বটেই, নাড়ির বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। … একুশের আনুষ্ঠানিকতায় তাদের বড় একটা দেখা যায় না।’
বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে আহমদ রফিকের অবদান বহুমুখী। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শুরু থেকেই। রবীন্দ্র গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে তাঁর গ্রন্থগুলোও বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, সাহিত্য, রাজনীতি এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। তাঁর কাব্যচর্চার বয়সও ছাড়িয়েছে ছয় দশক। ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহবাজপুর গ্রামে জন্ম তাঁর। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ছাত্রজীবনেই শখ্য গড়ে ওঠে সাহিত্য এবং ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে, যার ধারাবাহিকতায় যোগদান ভাষা আন্দোলনে। আহমদ রফিকের প্রথম কবিতার বই ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত – ‘নির্বাসিত নায়ক’। রবীন্দ্রচর্চা বিকাশের জন্য ১৯৮৯ সালে গড়ে তোলেন ‘রবীন্দ্রকেন্দ্র’ নামে ট্রাস্ট সংগঠন। ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমি পদক এবং ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন কবি আহমদ রফিক। বর্তমানে সাহিত্যচর্চাই তাঁর একমাত্র পেশা ও নেশা।