বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌‌স

কথা ইশারা

Price
380 BDT

Published on
May 2014

ISBN
9789849049753

Category


স্পর্শের জালে বিভোর হয়ে মুখবই দেখতে দেখতে বই হারিয়ে যাওয়ার উল্লাস তুলতে তুলতে সবাই যখন নিজেরাই লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য গহিন এক উপনিবেশে, মামুন হুসাইন তখন নিজেকে ফিরে দেখছেন ‘কথা ইশারা’য়; নিজেকে, কিংবা অতীতজাড়িত বিপন্ন ভবিষ্যতের দিকে ইঁদুরদৌড়ে ছুটে চলা আমাদেরও। ‘কথা ইশারা’ তাঁর নিজের কথায়, ‘তাদেরই টিপসই এবং জলছাপ’ ‘বিবিধ উদ্বিগ্নতা এড়ানোর জন্যে যেসব মানুষের সঙ্গে দল বেঁধে’ একদিন হেঁটেছেন তিনি। অসমাপ্ত অবয়ব নিয়ে তারা দেখা দেয় আমাদের কাছে, কিন্তু তাদের সামগ্রিকতা ধরা পড়ে আমাদের কান্নার শক্তির মুঠোতে, স্বপ্নভঙ্গের বেদনাতে, যে-পথের শেষ জানা নেই অথচ যে-পথে যেতেই হয় সে-পথের প্রতিটি পদক্ষেপে। অনেক আগে ঈশ্বরের কাছে কাঁদবার শক্তি না হারাতে প্রার্থনারত এক ঋজুমানবও ডাক দিয়েছিলেন কথা ইশারায়। ‘পুরাতন হয় নতুন পুনরায়’ তাই আমরা আবারো কথা ইশারার হাতছানি পাই। পাই ‘নিজস্বতা’ প্রমাণ করার যে উন্মাদনা চলছে অথবা চলছে ‘নিজেকে প্রতিস্থাপন করার যে ইঁদুর-দৌড়’ তার ভয়ংকর কথাচিত্র। এর ফাঁকফোকর গলেই আবার উঁকি দেয় মামুন হুসাইনের মামুন হুসাইন হয়ে ওঠার আয়োজন, যা তাঁর অন্য কোনো গ্রন্থের পাঠ থেকে পাওয়া কখনো সম্ভব নয়।

নিজের কথাই লিখেছেন বটে মামুন, খুঁজেছেন তাঁর বিবিধ পদচিহ্ন; নিজের নিরীহ সাদামাটা জন্মবৃত্তান্তের খানিকটা ডিমেন্টিক হতে থাকা মায়ের দাদির কাছে শুনতে শুনতে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন পাখিহীনতার কষ্টে আচ্ছন্ন শিশুপুত্রের। তবু ব্যক্তিগত গদ্য হয়েও তা ব্যক্তিগত নয়। শেষ পর্যন্ত ‘কথা ইশারা’ সমকালের যৌথ কোরাস, উত্তর-অন্বেষা। যে-শনাক্তকরণ চিহ্ন তিনি তুলে ধরেন, শুরুর যে-পাঁচালি বয়ন করেন, কিংবা সমসময়ের মানুষের সঙ্গে চলতে চলতে নিরুপায় বাজার-সদাইয়ে শামিল হন, সেসবের সবকিছুতেই ঘটতে থাকে সামাজিক সংখ্যালঘুত্বের ব্যক্তিক উদ্ভাস। একটু একটু করে সময়কে চিনতে থাকি আমরা, চিনতে থাকি মামুনকেও, যিনি শেষ পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেন, ‘এখন মনে হয়, লেখায় আধুনিকতার চেয়ে ট্র্যাডিশন আবিষ্কার করাই বড় সমস্যা!’

বিস্মিত হওয়ার, সংশয়ী হওয়ার এবং উত্তর খুঁজে ফেরার বেলায় চিরতরুণ মামুন। মৃত্যুচিন্তা, একাকিত্ব, সৌন্দর্যবোধ কিংবা চোখের জল অনন্ত বিস্ময়সমেত বারবার সংশয়ী করে তাঁকে। ইলিয়াসকে নিয়ে কয়েকটি লেখা এবং বক্তব্য আছে তাঁর বইয়ে।

সৌন্দর্যের তত্ত্বতালাশ করতে করতে মামুন দেখা পান ইউল ডুরান্টের এবং মানুষকেই তিনি সবচেয়ে সৌন্দর্যময় বিবেচনা করেছিলেন জেনে সামান্য ভরসা খুঁজে পান নিজের বিদ্যাবুদ্ধির ওপরে; আবিষ্কার করেন আশ্চর্য-সুন্দর এক বেহালাবাদক মানুষকে, তিনি তার স্টেডিভেরিয়াস-বেহালা বাজানো হাতটি রাখেন চুপচুপ ফরমালিনে মায়ের কর্কট-আক্রান্ত বুক আবদ্ধ করে রাখা মামুনের মাথার ওপর, চোখে জল জমে তার, অনুভব করেন, ‘…এই শহরের তাবৎ বুদ্ধিবাদী-সংগীততৃষ্ণার্তদের কাছে অ্যাপিল করার পরেও একটি রেকর্ড করা যায় না রঘুকাকার।’ তবু তিনি সৌন্দর্যবিষয়ক অসামান্য সব পাঠ দিয়ে যান, ‘কাকা, সুন্দর কিছু দেখলেই আমার চোখ ভিজে যায়।’ ‘সৌন্দর্য কি তবে কান্নার দ্যোতক?’ ভাবতে শেখেন মামুন।

অতীতে প্রত্যাবর্তন নয়, আপাতনির্লিপ্ত এক ঘোরে কালের উজ্জ্বলতা আর নিষ্প্রভতায় পরিভ্রমণ করতে করতে মামুন আমাদের যেন দেখান বর্তমানের এই উপনিবেশ, যা নিদারুণ নিরুপায়তার। আমাদের সাহস নেই সেই ঔপনিবেশিক জাল ছিন্ন করার আরো সত্যি করে বলতে গেলে, আমরা মনেই করি না আবদ্ধ হয়ে আছি নতুন এক উপনিবেশে। সেই উপনিবেশ কেমন, তার কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা তিনি নিজেও পান পেশাগত জীবন থেকে, পাদ্রীশিবপুরে কিংবা পাবনায় গিয়ে।

‘কথা ইশারা’ এক বিষণœ শক্তি হয়ে আমাদের ইন্ধন জোগায় প্রসন্ন হতে, সামনের দিকে এগোতে। মামুন হুসাইনের এ-গ্রন্থ আমাদের তাড়িত করে অতীতকে নতুন করে দেখতে, নতুন উপনিবেশের মুখোমুখি হতে, জিজ্ঞাসু হতে। যে-মুখ আমরা লুকিয়ে রেখেছি আমাদের থেকে, সে-মুখের উদ্ভাসে যেন হঠাৎ করেই শিমুল তুলোর বাউরি ওড়ে। উড়তে উড়তে রোদ পিঠে করে, পাঁচ আঙুলে চোখ বাঁচিয়ে আারো হাঁটতে ডাক দেয় আমাদের।



Buy this book from:



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *