কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি সংঘটিত গণহত্যাগুলোর মধ্যে জার্মান গণহত্যা নিকৃষ্টতম, যা ইতিহাসে ‘হলোকস্ট’ নামে পরিচিত। কি মৃত্যুর পরিসংখ্যানে, কি নৃশংসতায়, কি বৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিক অভিনবত্বে এই হলোকস্ট নজিরবিহীন। একবার ভাবুন, গণহত্যা কার্যকর করা হচ্ছে কল্পনাতীত পদ্ধতিতে-গণকবরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে শবদেহের ওপর শবদেহ, অগ্নিকু-ে ঝলসে উঠছে আদম সন্তান, সায়ানাইড গ্যাসে ১৭ x ৪.৪ মিটার আয়তনের গ্যাস চেম্বারে সাত-আটশো বন্দিকে ঠেসে হত্যা করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে গাছে ঝুলিয়ে, হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে, আহত-নিহতদের হিংস্র কুকুর লেলিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী অপ্রাপ্তবয়স্ক ও কোলের শিশুদের বধ্যভূমির সামনে গুলি করে বিশাল গর্তে ফেলে আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হচ্ছে এবং কখনো জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। হিটলারের এই অনার্য নির্বংশকরণের বলি হয়েছিল এক কোটি সত্তর লাখ মানুষ! আর এই মৃত্যুযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল জার্মানিসহ ইউরোপের ৪২ হাজার ৫০০টি ক্যাম্পে।
এই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোই কনসেনট্রেশন ক্যাম্প কবিতাধারার জন্মস্থান। যেসব বন্দি মৃত্যুর আগে ছেঁড়া কাগজ, টিস্যু পেপার, এক টুকরো কাঠ, পরনের পোশাক, জুতা ইত্যাদি অচিন্তিতপূর্ব মাধ্যমে কবিতা লিখে রেখে গেছেন, তাঁরাই ক্যাম্পধারার প্রথম কবি। যাঁরা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাঁরা লিখেছেন তাঁদের যন্ত্রণা ও অভিজ্ঞতার কথা; তাঁরাও প্রত্যক্ষদর্শী কবি। যেসব বিদেশি সেনা ক্যাম্পগুলোকে মুক্ত করেছেন, তাঁদের গদ্য-সাক্ষ্য রূপান্তরিত হয়েছে কবিতায়; তাঁরা অ-কবি কবি। আর যাঁরা বিখ্যাত কবি, তাঁরা তো লিখেছেনই; তাঁরা পরোক্ষদর্শী কবি, শোকপর্বের কবি। সব মিলিয়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প : কবি অ-কবি প্রত্যক্ষদর্শী ও পরোক্ষদর্শীদের কবিতা।