
টরে টরে টক্কায়
সৈয়দ শামসুল হক রচিত শিশুতোষ ছড়ার বই ‘টরে টরে টক্কায়।’ আর্ট কার্ডে ছাপা রঙিন মলাটের ৪৮ পৃষ্ঠার এই বইটিতে মোট ১০টি ছড়া আছে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী রফিকুন নবী। বইটির প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশন্স।
সৈয়দ শামসুল হকের ছড়ায় বিষয়-বৈচিত্র্য, কল্পনার বৈভব, হাস্যরসের দ্যোতনা, ছন্দনৈপুণ্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাংলার শিশুদের আবেগ, স্বপ্ন-কল্পনা, বেদনা, হতাশা, কৌতূহল থেকে শুরু করে তাদের চারপাশের চেনা জীবন-জগৎ, জনমানুষ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বীরগাথা, প্রকৃতি, উৎসব-পার্বণ ইত্যাদি ছড়াগুলোর বিষয়-অনুষঙ্গ। বিচিত্র বিষয়বস্তু উপস্থাপনার চমৎকারিত্বে পেয়েছে অপূর্ব ব্যঞ্জনা। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গীতিময় ছড়া যেমন আছে, তেমনি আছে চমকপ্রদ আখ্যানধর্মী ছড়া, কোনোটি আবার নিটোল হাস্যরস প্রধান। তবে সব লেখার লক্ষ একটাই- শুভ, কল্যাণবোধ জাগিয়ে তোলা ও নির্মল আনন্দ দান করা।
ছোটদের জন্য সৈয়দ হক যা লিখেছেন সেখানে ভাষা কিংবা ভাষা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ন্যাকামির কোনো স্থান নেই। সহজ ভাষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যে লেখা যায় এটা বোঝা যায় তাঁর ছোটদের জন্য লেখা ছড়াগুলোতে। শিশুমনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার পরিতৃপ্তি বাবা-মা তথা বড়রা হয়তো বস্তুগত কোনো বিষয়ের সাহায্যে দিতে চান; কিন্তু সে বস্তুগত বিষয় উত্তর এনে দেওয়ার পরিবর্তে শিশুমনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। কারণ শিশুর মানসিক পরিচর্যাকারীকে অবশ্যই শিশুর মনস্তত্ত্ব বুঝতে সমর্থ হতে হবে। মহাসমুদ্রের তলদেশ থেকে হয়তো সুই খুঁজে তুলে আনা সম্ভব, কিন্তু শিশুমনের নাগাল পাওয়া সুদূর পরাহত। এইসব ছড়া দিয়েই সেই মনের নাগাল খোঁজার প্রয়াস।
ছড়ার বিষয় নির্বাচন এবং উপস্থাপনায় বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে এই বইয়ে। মায়ের কোলে শুয়ে বর্ণমালা শিখতে শিখতে লক্ষ্মী মেয়ে, দস্যি ছেলের ঘুমিয়ে পড়া, তারপর কল্পনার রাজ্যে তার শিশুসুলভ বিচরণ। কখনও বর্ণ নিয়ে তৈরি শব্দ, আর শব্দের খেলায় কবি শিশুদের শিক্ষণীয় দিক উপস্থাপন করেছেন সহজ সাবলীল ভাষায়। ছড়ার ছন্দে শিশুদের সামনে তুলে ধরেছেন ভাষা-আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। শহরে বেড়ে ওঠা শিশুদের সামনে এঁকেছেন অপরূপ গ্রামের দৃশ্যকল্প, পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই দেশের মাটি, মানুষ, নদী তথা ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে।
এই ছড়ার বইয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য শিল্পী রফিকুন নবীর অলঙ্করণ। তুলি, কলমে আঁকা পরিমিত রঙের ব্যবহারে এই সব অলঙ্করণ, ছড়ার ছন্দের সাথে মিলে শিশুদের নিয়ে যাবে কল্পনার রাজ্যে।
মোট ১০টি ছড়া
পড়া
বর্ণমালা পড়ছে বাবু
শব্দ খেলা
ঘুমহারা
আমি শহরে তুমি গ্রামে
তাকিয়ে দেখি
যাত্রা
এক যে ছিলো তাঁতী
হস্তি আর ছুঁচো
টরে টরে টক্কায়