
দগ্ধ দেহে চাঁদের নবনী
শব্দের মাধুর্য ফুল হয়ে ফোটে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায়; প্রেম ও সময়ের তাপ মানবিক বোধ নিয়ে উন্মোচিত হয়।সমাজ ও মানুষকে প্রত্যক্ষ করার গভীর অভিজ্ঞতা অনূদিত হয় তাঁর কবিতায়। ‘দগ্ধ দেহে চাঁদের নবনী’তেও এই ছাপ স্পষ্ট। অভিজ্ঞতা আর আত্মসচেতনতার মিশ্রণে শব্দেরা খেলা করেছে এ কাব্যগ্রন্থে।
৩৬টি কবিতা স্থান পেয়েছে এ বইয়ে। ‘মধ্যরাতে চাঁদের শেষে’, ‘যাই তবে যাই’, ‘সন্ধ্যার পাখিটি’, ‘তার চোখ’,‘লোকপ্রত্নের শামসুজ্জামান’ এরকম বিভিন্ন কবিতায় শোভিত কাব্যগ্রন্থটি। তবে ভাষা, দৃশ্যের যে সমন্বয় এখানে ঘটেছে তাতে কবিতার বইয়ের বদলে চিত্র প্রদর্শনী বললেও অত্যুক্তি হয় না। শব্দের গাঁথুনি আর অর্থের প্রাঞ্জলতায় পাঠক ডুব দিতে বাধ্য পরানের গহীন ভেতরে। ‘একটি কথা নীরব রেখে’যেমন হাহাকারে ভরপুর তেমনি ‘উত্তল কোরাসে’ আশার কথা বলছেন কবি, ‘সূর্যের উদয় হোক আমাদের রাত্রিজাগা দেশে।।’ ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য কবিতার পাশাপাশি বেশকিছু দীর্ঘ কবিতাও স্থান পেয়েছে বইয়ে। সবকিছু মিলিয়ে ছোট্ট এ কাব্যগ্রন্থের ব্যাপ্তি আসলে বিশাল।
বাংলা সাহিত্যের প্রতি এক বড় উপহার শামসুল হক। বহুধা গুণে গুণান্বিত বলে সব্যসাচী লেখক নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। সাহিত্যে এমন শাখা নেই যেখানে তিনি সফলতার স্বাক্ষর রাখেননি। বিচিত্র অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিলেন। আর তার প্রতিফলন ঘটে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে। কাব্যও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘দগ্ধ দেহে চাঁদের নবনী’ও তাঁর এমন সৃষ্টি যার প্রতিটি পঙক্তির আড়ালে রয়েছে রুক্ষতা ও স্নিগ্ধতার মায়াময় দৃশ্যাবলি।