
সনৎকুমার সাহা
‘পৌরাণিক সাম্প্রতিক’ – সনৎকুমার সাহার লেখা একটি প্রবন্ধের বই । প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রফিকুন নবী।
সনৎকুমার সাহা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক। বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সনৎকুমার সাহার প্রিয় বিষয় হলেও এ বইয়ে রামায়ণ ও উপনিষদের মর্মবাণীকে তিনি নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। গ্রন্থভুক্ত অন্যান্য প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেছেন সাম্প্রতিক সাহিত্যের নানা দিকও। বইটির নাম থেকেই ব্যাপারটা বোঝা যায়।
বইয়ের শুরুতেই আমরা পাই প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের ওপর, মূলত পৌরাণিক ওপর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ, নাম ‘ইতিহাসের মায়াদর্পণে।’ তারপর পাই বাল্মীকি রচিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাকাব্য রামায়ণ নিয়ে একটি দীর্ঘ সন্দর্ভ ‘রামায়ণী কথা।’ ‘মহাভারতের দিনকাল’ প্রবন্ধটি মহাভারতে উল্লিখিত কাহিনির সময়কাল নিয়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কবে সংঘটিত হয়েছিল তার পক্ষেবিপক্ষে নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন এই জাতীয় আর কি। এরপরে ‘উপনিষদে ইহজাগতিক বার্তা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শিরোনামে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি রচনা। তারপর পাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথের পরের সময়কাল নিয়ে বড় রচনা। ‘সংগীত ও সংস্কৃতি’ ও ‘কী গান গাব যে’ নামক প্রবন্ধ দুটিতে পাই সংগীতের সাধনা, উচ্চাঙ্গসংগীত বিষয়ক বিশ্লেষণ, এই অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাকার বিষয়ে কথাবার্তা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বাংলা ছোটগল্পের অবস্থা নিয়ে রচিত হয়েছে ‘ছোটগল্পের হালচাল’ প্রবন্ধটি। প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে ইতিহাস আর বিশ্ব সাহিত্যের অনেকের ছোটগল্পের কথা।‘তিতাস-এর সূত্র ধরে’ প্রবন্ধটিতে অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উঠে এসেছে বিশ্ব সাহিত্যের অনেক বিষয়-আশয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি তুলনামূলক আলোচনা। অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও অধ্যাপক আলী আনোয়াররের মৃত্যুর পর তাঁদের নিয়ে ভিন্ন সময়ে লেখা দুটি প্রবন্ধ আমরা পরবর্তীতে পরপর পাই, ‘ফিরে দেখা : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’ এবং ‘কাছে ছিলে, দূরে গেলে : আলী আনোয়ার’ শিরোনামে।
‘পাঁচ অঙ্কে মনীষী-জীবনস্মৃতির একখণ্ড’ শিরোনামে রচনাটি মূলত ২০১৫ সালে প্রকাশিত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ‘বিপুল পৃথিবী’ নামক বইয়ের ওপর আলোচনা। আর ‘এখন কবি মোহাম্মদ রফিক’ লেখাটি ষাটের দশকের বাংলা কবিতার অন্যতম কবিদের একজন মোহাম্মদ রফিকের সাম্প্রতিক কবিতা তথা মূলত দুটি কবিতার বইয়ের কবিতার ওপর আলোচনা। তারপরে ‘স্বপ্ন-বাস্তবের দ্বন্দ্ব-সমাস’ এই নামে একটি যে প্রবন্ধটি পাই তা ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের আরেকজন মাহমুদ আল জামানের কবিতা নিয়ে লেখা। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সাহিত্য জীবনের শুরুটা নিয়ে এটি লেখা আছে ‘আমাদের সেলিনা হোসেন’ শিরোনামে। বইয়ের শেষে ‘নয় এ মধুর খেলা’ নামে আছে একটি বই আলোচনা। বইটি দীপা বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘খুলনা একাত্তর : আমার মুক্তিযুদ্ধ’ নামে ২০১৪ সালে বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
সনৎকুমার সাহার ভাবনার পরিধি ব্যাপক। তাই লেখাগুলিও নানা বিষয়ে নানা সময়ে রচিত। একটা বইয়ের পরিকল্পনা মাথায় রেখে লেখাগুলি তৈরি হয়নি। নানা তাগিদ প্রত্যেকটির আলাদা-আলাদা নিজের ভেতর থেকে, বাইরে থেকেও। তাই বই হওয়ার আগে লেখাগুলি প্রকাশিত হয় নানা জায়গায়, নানা পত্র-পত্রিকায়। আর এইসব লেখা গত দশ-বারো বছরের ভেতরে লেখা।