
বাংলার রেনেসাঁস ও লালন ফকির
‘বাংলার রেনেসাঁস ও লালন ফকির’ গ্রন্থের রচয়িতা আবু ইসহাক হোসেন পেশায় ব্যাংকার। সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তাঁর পদচারণা। লালন সাঁইকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় রত তিনি।
উল্লিখিত গ্রন্থে লালন ফকিরের দার্শনিক ও সমাজচিন্তক রূপটি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। লালন সাঁই তাঁর সময়ের সামাজিক কুপ্রথা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজমানুষের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তি। তিনি ছিলেন সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষের নেতা। তাঁর গানে ধ্বনিত হয়েছে এই নিচু শ্রেণির মানুষের মুক্তির আহ্বান। উনিশ শতকের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক প্রথা জাতিভেদকে তিনি অস্বীকার করেছেন দৃঢ়কণ্ঠে। তাঁর গানে কথায় চিন্তায় বারবার উঠে এসেছে যে, এ প্রথা সমাজ সৃষ্ট। এ প্রথাকে বাদ দিতে হলে সমাজ বদলাতে হবে। আর তাতেই মিলবে দলিত মানুষের অধিকার।
মরমি সাধক লালন ফকিরের এ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এদেশে সূচিত হয় নবজাগরণের। অবশ্য সে সময়ে কলকাতাকেন্দ্রিক নবজাগরণও বেশ সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু তা ছিল একান্তই শহরকেন্দ্রিক। অন্যদিকে লালন সাঁইয়ের সমাজের-অর্গল-ভাঙা আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল গ্রামের সহজ-সরল, বঞ্চিত মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। শুধু গ্রাম নয়, শহরের শোষিত বঞ্চিত মানুষকেও স্বপ্ন দেখিয়েছে তাঁর গান-কথা। এক অর্থে বাংলায় রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সূচনাবিন্দুতে অন্যতম নাম লালন ফকির। তাঁর সেই মহান কীর্তিগাথা এবং একই সঙ্গে সমসাময়িক অন্যান্য বিদগ্ধজনের কথা সংযোজিত হয়েছে এ গ্রন্থে।