
বাঙালির কলের গান
বাঙালির কলের গান বাঙালির সংগীতচর্চার ইতিহাস নিয়ে একটি অমূল্য গ্রন্থ। গ্রন্থটি যে-সকল কারণে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ১. হারিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির সন্ধান, ২. সংগীতের ঐতিহ্যের অন্বেষা, ৩. কলের গানের শিল্পীদের পরিচয়, ৪. দু®প্রাপ্য তথ্য-দলিল উদ্ঘাটন। আমরা জানি, দু®প্রাপ্য দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস-নির্মাণে আবুল আহসান চৌধুরীর অবদান দুই বাংলার বিচারেই শীর্ষে। রবীন্দ্র-সংগৃহীত লালনের গানের পা-ুলিপি উদ্ধার ও হুবহু প্রকাশ করে তিনি বাঙালির কাছে ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। শান্তিনিকেতনে রক্ষিত এই মহামূল্য দলিল ভারতের কোনো গবেষকের আগে বাংলাদেশের আবুল আহসান চৌধুরী উদ্ধার ও প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত কয়েকটি পত্র উদ্ধারের কৃতিত্বও তাঁর। তিরিশের আধুনিক পাঁচ কবির পত্রবালি ছাড়াও অন্নদাশঙ্কর রায়ের পত্রাবলিও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। কাজী আবদুল ওদুদের পত্রাবলি উদ্ধার করে তিনি ওদুদচর্চায় নতুন রসদ জুগিয়েছেন। অনেক নতুন গবেষণার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তাঁর প্রতিটি গবেষণায়।
‘বাঙালির কলের গান’ গ্রন্থের সূচিপত্র দেখলে মনে হয় ১০টি প্রবন্ধের সমাহার। কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছিল সাক্ষাৎকার হিসেবে। কিন্তু প্রতিটি প্রবন্ধই রচিত হয়েছে ব্যাপক অনুসন্ধান ও গবেষণার ওপর ভিত্তি করে। ‘বাঙালির কলের গান : কাল-কালান্তর’ নামে প্রথম প্রবন্ধে বিধৃত হয়েছে গ্রামোফোন যন্ত্রের জন্মকথা আর সে-সূত্রে কলের গানের ইতিহাস। বাংলা গানের বিকাশে কলের গানের প্রভাবও বর্ণিত হয়েছে এতে। তৃতীয় প্রবন্ধে রয়েছে ‘হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি’র ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান রেকর্ডের মাধ্যমে এ-প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন চণ্ডিচরণ সাহা। একসময়ে রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ-প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিও ছিলেন। সংগীতশিল্পী যূথিকা রায়ের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার রয়েছে এ-গ্রন্থে। ৭২ পৃষ্ঠার এ-সাক্ষাৎকারে যূথিকা রায়ের বেড়ে-ওঠা, সংগীতশিক্ষা, সংগীতশিল্পী হয়ে-ওঠা, কমল দাশগুপ্ত, ফিরোজা বেগম, সমকালীন সংগীতচর্চা ও সংগীতশিল্পী প্রভৃতি বিষয় ফুটে উঠেছে। কেবল কলের গানের ইতিহাস নয়, কলের গানের ভেতর দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসই নির্মাণ করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। বইটির শেষে রয়েছে কলের গানের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু দু®প্রাপ্য আলোকচিত্র। বইটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এ-ছবিগুলোর সংযুক্তি যথার্থ। বাংলা গানের ইতিহাস রচিত হয়েছে, কলের গানের ইতিহাস রচনা করে বাংলা গানের ইতিহাসকেই সমৃদ্ধ করেছেন আবুল আহসান চৌধুরী।