
মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন
মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির প্রামাণ্য দলিল ‘মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন’। লেখক মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম নিজের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য দালিলিক পুস্তক থেকে এক মলাটে আবদ্ধ করেছেন সব সেক্টরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি।
শোষণ, অবিচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের এক আবেগঘন প্রতিঘাত মুক্তিযুদ্ধ। মাত্র নয় মাসে ঘটে যায় রক্তাক্ত মহাকাব্য। এর ব্যাপ্তি অনেক গভীর। ভাসা ভাসা কাহিনী বর্ণনা না করে এই বইয়ে নৈর্ব্যক্তিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ফ্যাক্ট – প্রকৃত ঘটনা। এতে করে আলাদা আলাদা ঘটনা চিহ্নিত করা যায় এবং অনুধাবন করা যায় এর বিশালতা ও গভীরতা। কারণ সম্মিলিত যুদ্ধ বিভক্ত ছিল ছোট, বড়, মাঝারি বিভিন্ন ঘটনায়। যুদ্ধের প্রচণ্ডতা ও ব্যাপকতার ওপর নির্ভর করে এসবের নামও ভিন্ন – ব্যাটেল, ওয়ার, ফাইট, অ্যাটাক, অ্যামবুশ, অপারেশন, কমান্ডো অভিযান ইত্যাদি। এরকম সব ঘটনার আলাদা ও বিবরণের ফলে বইটি রূপ নিয়েছে একটি চমৎকার তথ্যভাণ্ডারে। আর এটি সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সেক্টর ও তারিখ অনুযায়ী। তাই এসব তথ্য পাঠোদ্ধার করাও হয়ে গেছে সহজ।
লেখক নিজে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার হিসেবে রণাঙ্গনে লড়েছেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। দুই খণ্ডের ‘গেরিলা থেকে সম্মুখযুদ্ধ’-এর জন্য তিনি অধিক পরিচিত। তাঁর লেখনীতে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও অনুপুঙ্খ ঘটনাবলি। কখনও যুদ্ধকৌশল, কখনও উঠে আসে গেরিলা যুদ্ধের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধের বিবরণ। যুদ্ধদিন খুবই বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রতিফলিত হয় তাঁর লেখায়। যে কজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে মাহবুব আলমের বর্ণনা খুবই মনোগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অসম সাহস ও শৌর্যের সঙ্গে উঠে এসেছে রণাঙ্গনের গভীর ও অনুভূতিময় সূক্ষ্ম বিষয়ও। যুদ্ধকালে তিনি দিনলিপি লিখে রাখতেন। সেই দিনলিপিকে ভিত্তি করে তিনি বিরতিহীনভাবে লিখে চলেছেন রণাঙ্গনের বীরত্বগাথা। সেসবেরই আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন’। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় বইটি।