
মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নারী-নির্মাণ
এ বইটি একটি গবেষণাকাজের ফল। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ গবেষণা প্রজেক্টের আওতাধীনে গবেষণাটি করা হয়েছিল। আমি প্রথমেই তাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভকে, আমাকে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নারী-নির্মাণের মতো কঠিন একটি গবেষণাকাজ করার জন্য ফেলো মনোনীত করায়। এই ফেলোশিপটি না পেলে গবেষণাটি এই মাত্রায় করা সম্ভব হতো না।
গবেষণাকাজটি পরিচালনার সময় আমার তত্ত্বাবধায়ক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন যে উৎসাহ দিয়েছেন, সেজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমার ছাত্রী তানিয়া মুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী, আমার গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমার ভাগনি অমিয়ধারা এবং আমার ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ডি এম তৌহিদুল আলমকে কৃতজ্ঞতা জানাই ভিডিও থেকে ক্লিপিং এবং ছবি বের করে দেওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা জানাই আমার বন্ধু চলচ্চিত্রকার প্রতীক সেনগুপ্তকে। শুরু থেকেই তিনি আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন কাজটি করার জন্য এবং পাণ্ডুলিপিটি পড়ে মতামত দেবার জন্য। কাজটি কঠিন, সন্দেহ নেই। ধন্যবাদ জানাই এডিনবরা নেপিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রবার্ট রেসাইডকে, যিনি এই গবেষণাকাজটি শুরু করার পর আমার দুই দফা এডিনবরা অবস্থানকালে চলচ্চিত্রবিষয়ক নানা বই ও চলচ্চিত্রের সন্ধান দিয়েছেন এবং বিশ্বযুদ্ধ-চলচ্চিত্র বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধ-চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্বশীল চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
গবেষণাকাজটির অংশ হিসেবে একটি সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে হয়েছিল। ২৩ মে ২০১১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মিসেস কামরুন্নাহার এবং আলোচক হিসেবে দিকনির্দেশনা দেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সময় টেলিভিশনের সিইও জনাব মোরশেদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক সোনিয়া নিশাত আমিন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক জনাব সাত্তার মিঞাজী। তাঁদের সবাইকে আমার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
‘লেজার ভিশন’-এর স্বত্বাধিকারী জনাব ফরিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছয়টি চলচ্চিত্রের ডিভিডি দিয়েছেন এবং ফিল্ম আর্কাইভের লাইব্রেরি থেকে চারটি ডিভিডি ধার করেছি। উভয় ক্ষেত্রেই আমার ঋণ স্বীকার করছি।
একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়। কাজটি আসলে শুরু হয়েছিল আগেই। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসবে বন্ধু চলচ্চিত্রকার ফৌজিয়া খানের অনুরোধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনের অনুরোধ জানালে অনুরোধটি উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করলে চলচ্চিত্রকার জনাব মানজারেহাসীন মুরাদ, চলচ্চিত্রকার জনাব সালাউদ্দিন জাকি, চলচ্চিত্রকার শামীম আখতার, নারী আন্দোলনের নেতা আয়শা খানম এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক প্রবন্ধটির ওপর দীর্ঘ আলোচনা করেন। তাঁদের বিদগ্ধ আলোচনা এ বিষয়ে আমার পঠন এবং দেখার চোখকে প্রসারিত করেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করার সময়ে তাঁদের সেই আলোচনা আমাকে সাহায্য করেছে। কৃতজ্ঞতা তাঁদের প্রতিও।
২০১১ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি তার হীরকজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে। একই সঙ্গে বছরটি স্বাধীনতার চল্লিশ বছর উদ্যাপন এবং রবীন্দ্র সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী পালন করার বছর হওয়ায়, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নাল, হীরকজয়ন্তী সংখ্যার থিম ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও রবীন্দ্রনাথ। সম্পাদকমণ্ডলী এই গবেষণাকাজ থেকে বের করে আনা একটি অংশ এই হীরকজয়ন্তী সংখ্যায় বের করে কৃতজ্ঞ করেছেন।
গবেষণা মনোগ্রাফ থেকে বই বের করা বেশ কষ্টসাধ্য প্রয়াস। বলছি মুদ্রণ এবং পরিস্ফুটনের আয়াসের কথা। এই বইটিতে প্রচুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যে ছবিগুলোকে পরিস্ফুট করা ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানের কাগজে ছবিগুলো মার খেয়ে যাবার আশঙ্কা প্রচুর। আর ছবিগুলোর পরিস্ফুটন মানও অত্যন্ত দুর্বল, বিশেষ করে সত্তরের দশকের চলচ্চিত্র। ডিভিডি থেকে অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় ঝাপসা হয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় ছবি বাছাই করে বইয়ের জন্য ব্যবহার করা খুব কঠিন। ফিল্ম আর্কাইভের সরকারি বাজেটে যে সেই ছবিগুলোর ব্যাপারে যথাযথ যতœ নেওয়া সম্ভব হবে না, সে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন স্বয়ং ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মিসেস কামরুন্নাহার। এই বিবেচনার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রাপ্য। তা হলে কোথা থেকে বের করা যায় এই বই নিয়ে যখন চিন্তায় আছি, তখন হঠাৎই শুনতে পাই বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এ-বছরই প্রথম বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড নামে বই প্রকাশনা শুরু করতে যাচ্ছে। আরো জানা গেল এই বই প্রকাশনার মূল দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন সংবাদ-কালি ও কলম-শিল্প ও শিল্পী খ্যাত সম্পাদক জনাব আবুল হাসনাত। অতঃপর দ্বারস্থ হলাম আবুল হাসনাত ভাইয়ের কাছে পাণ্ডুলিপি নিয়ে। সেই থেকে বইয়ের ভালোমন্দ তিনিই দেখেছেন। তাঁকে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অঙ্গসজ্জা করে দিয়েছেন কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। নিজেকে এর চেয়ে সৌভাগ্যবান আগে খুব বেশি মনে হয়নি। কৃতজ্ঞতা এক্ষেত্রে খুব কম মনে হয়। মোঃ আওরঙ্গযেব ভাই অক্ষরসজ্জা, পেজ মেক-আপের কাজগুলো যে ধৈর্য নিয়ে করেছেন, তাঁকেও আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। শুরুতে বইটির প্র“ফ দেখে দিয়েছেন কমল কর্মকার ও চূড়ান্ত প্র“ফ দেখেছেন মোঃ মহসীন আলী ভাই। এই সুযোগে তাঁদের দুজনকে কৃতজ্ঞতা।
সবশেষে আমার কৃতজ্ঞতা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন যেসব চলচ্চিত্রকার এবং এসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সব কলাকুশলী, নির্মাতা, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে Ñ যাঁরা কাজটি শুরু করেছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং এখনো যাচ্ছেন।