
সংগীত মঞ্জুরি
‘সংগীত মঞ্জুরি।’ ফিরোজ আহমেদ ইকবাল রচিত সংগীত বিষয়ক একটি বই।
বইটির প্রথম অধ্যায়ে বিভিন্ন গানের পরিচয় উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে বিলুপ্ত হওয়ার পথে আরো কিছু গান রয়েছে, সেগুলো আনতে পারলে অধ্যায়টি তুলনামূলক অধিক প্রশংসিত হতো।
বইটিতে উদাহরণ প্রদানের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় গানগুলোর ব্যবহার যথোপযুক্ত মনে হয়েছে। বর্ণের ক্রমানুসারে সাজানো গীত, বাদ্য ও নৃত্য ঘরানাগুলো দ্বিতীয় অধ্যায়কে ব্যতিক্রমভাবে উপস্থাপন করেছে। তৃতীয় অধ্যায়ে সংগীতজ্ঞদের জীবনী বেশ তথ্যসমৃদ্ধ এবং জন্মের বছরের ধারাবাহিকতায় সাজানো হয়েছে, যা বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় বহন করে। সহজ-সরল ভাষায় লেখা তিনটি অধ্যায় সংগীতরসিক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের প্রয়োজন মেটাতে অনেকটাই সমর্থ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সংগীতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস সাড়ে চার হাজার বছরেরও পূর্বের দাবি রাখে। ফলশ্রুতিতে যুগে-যুগে কালে-কালে সংগীতের রূপমাধুর্য বিকশিত হয়েছে প্রবাহিত সময়ের বিদগ্ধ সংগীতগুণীজনদের আন্তরিক ভালোবাসাপূর্ণ সাধনার মধ্য দিয়ে। সংগীতবিদ্যা গুরুমুখী শিক্ষা হলেও সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তির বদৌলতে এখন তা তুলনামূলক সহজসাধ্য হয়ে নাগালের মধ্যে এসে পড়েছে। শ্রেষ্ঠ ললিতকলার মর্যাদায় আসীন সংগীতবিদ্যা উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্রিয়াত্মক হলেও এর তত্ত্বীয় বিষয়কে পাশ কাটানোর কোনো উপায় নেই। কেননা সংগীতের তত্ত্বীয় বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানা না থাকলে একজন শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ সংগীতশিল্পী হিসেবে বিকশিত হতে পারেন না বলেই সংগীত গুণীজনদের ধারণা। হয়তো সে কারণেই খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞরা সংগীতের তত্ত্বীয় বিষয়কে ব্যবহারিকের পাশাপাশি সবসময়ই সমান গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
সংগীত ক্রিয়াত্মক বিদ্যা তো বটেই, তবে একে শুদ্ধতার সঙ্গে ধারণ, সাধন ও লালন করার জন্য ঔপপত্তিক বিষয়ের কোনো বিকল্প নেই। ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান সুরসাধকবৃন্দ সে বিষয়টি উপলব্ধি করেই সংগীত নিয়ে সফর করেছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। ব্যবহারিক সংগীতের উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি তত্ত্বীয় বিষয়গুলোকে সমৃদ্ধ করে তুলতে তাঁদের প্রচেষ্টা ছিল নিরন্তর। আর সে কারণেই সময়ে সময়ে বিভিন্ন দেশে সংগীত সম্মেলন আয়োজনের কথা জানা যায়। পশ্চিমবঙ্গের অনেক সংগীতগুণীজন তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে উল্লেখ করার মতো বেশ কিছু মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংগীতপিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে সেই বইগুলো প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। সেই ধারাবাহিকতায় যোগ হলো এই বই। যদিও সংগীতের তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ও প্রচেষ্টা বাংলাদেশে সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংগীতের কিছু প্রাথমিক বিষয়, প্রচলিত কয়েকটি তালের পরিচয়, স্বরলিপিসহ সুপরিচিত কয়েকটি শাস্ত্রীয় সংগীত, জনপ্রিয় কয়েকটি গানের স্বরলিপি এবং কখনো কখনো কয়েকজন সংগীতজ্ঞের অতিসংক্ষিপ্ত জীবনী ছাপার অক্ষরে একত্রিত করার মধ্যেই সংগীতের বইগুলো সীমাবদ্ধ। এই বইয়ের লেখক সেই পথ থেকে সরে এসে সংগীতের তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনাসহ সমৃদ্ধ কাজ করার চেষ্টা করছে এটা খুবই সম্ভাবনার কথা।