ছড়ানো ভূগোলে ছোটগল্প
অনুবাদের সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো দুটি ভিন্ন ভাষায় বাস্তবকে দেখা ও সাজানো হয় আলাদা উপায়ে। আর সেই সাহিত্যের উৎস যদি হয় ছটি মহাদেশ তাহলে সেই জটিলতা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। এই জটিল কাজটি সার্থকভাবে সম্পন্ন করেছেন মেহবুব আহমেদ তাঁর ‘ছড়ানো ভূগোলে ছোটগল্প ’ বইয়ে।
নাম থেকেই বোঝা যায় এটি একটি ছোটগল্পের সংকলন যাদের মধ্যে ভৌগোলিক সামঞ্জস্য সুদূর পরাহত। যেন বিশ্বসংসারের আনাচ-কানাচ থেকে কুড়িয়ে আনা গল্প সব। তবে গল্পগুলোকে সুখপাঠ্য করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় এখানে। প্রতিটি গল্পের লেখক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করা আছে গল্পের আগে। তাছাড়া ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক দূরত্ব ঘোচানোর জন্য গল্পের শেষে যথাসাধ্য প্রয়োজনমাফিক ফুটনোট যুক্ত করা হয়েছে। ছটি মহাদেশের মোট ১৬টি গল্প স্থান পেয়েছে বইটিতে যেখানে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ছোটগল্পের একটি তুলনামূলক পাঠেরও সূচনা হতে পারে। কারণ একই মলাটের ভেতর যেমন আছেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, এলিস মুনরো তেমনি আছেন ঝুম্পা লাহিড়ী ও রমেশ গুনসেকেরাও। আবার এসব ছোটগল্পের বাস্তবতা কখনও কখনও মিলে যায় বাংলাভাষার গল্পের সঙ্গেও। ভাষার ব্যবধান ঘোচানোর সঙ্গে সঙ্গে অনুভবের নৈকট্য ঘটাতেও সার্থকতা দেখিয়েছেন অনুবাদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর সম্পন্ন করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মেহবুব আহমেদ। অনুবাদের আগ্রহ জন্মায় শখের বসেই। ভালোবেসে বেশ কিছু অনুবাদ করে ফেলেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কটি এর আগে ছাপা হয়েছে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলমে’। বিভিন্ন সময়ে করা অনুবাদকর্ম থেকে স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে এ গ্রন্থের গল্পগুলো। ২০১৫ সালে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয় গল্পসংকলনটি।