
বাংলাদেশের নদীকোষ
‘বাংলাদেশের নদীকোষ।’ ড. অশোক বিশ্বাস রচিত বাংলাদেশের নদ-নদীর বিশদ পরিচিতিমূলক একটি বই। যার দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হয়েছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে।
বইটির ভূমিকা থেকে জানা যায়, প্রথম সংস্করণে বইটিতে পাঁচ শতাধিক নদ-নদীর পরিচিতি ছিলো। আর এই দ্বিতীয় সংস্করণে আরো তিনশোটি ভুক্তিসহ মোট আটশোটির বেশি নদ-নদী, গুরুত্বপূর্ণ খাল, চ্যানেল, হ্রদ ইত্যাদির ব্যাপক তথ্য-উপাত্তসহ সংযোজিত হলো। প্রথম সংস্করণে ৬৪ জেলার মানচিত্রের মাধ্যমে নদ-নদীর গতিপ্রবাহ দেখানো হয়েছিল, দ্বিতীয় সংস্করণে যা বিভাগওয়ারি মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
ঐতিহাসিককাল থেকে সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-রাজনীতি ও বাংলাদেশের ভৌগোলিক গঠনে নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নদী ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। মাটি ও মানুষের সৃষ্টি-স্থিতি-ধ্বংস অনেকটা নদীরই হাতে। সেজন্য নদীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক রূপকথা, গল্পকাহিনি, পৌরাণিক উপাখ্যান, কিংবদন্তি, ছড়া, কবিতা, গল্প, কথাসাহিত্য। লেখক এ গ্রন্থে এইসব বিষয় তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন পরম মমতায়। নদ-নদীর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না, বাংলার ইতিহাসে নদীর ভূমিকা, নদীখাত পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন হয়েছে তা তুলে এনেছেন সফলভাবে। ভরাট, ভাঙন, বন্যা ও তার প্রভাব সম্পর্কে এ গ্রন্থে সার্বিক বিশ্লেষণ রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশের আন্তঃনদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সমস্যাসমূহ কী হতে পারে এর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ রয়েছে। সবকিছুর ওপরে এ গ্রন্থের বিশেষ দিক হলো এখানে বর্ণনানুক্রমিকভাবে ৮০০টিরও অধিক নদী সম্পর্কে উপস্থাপিত হয়েছে অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি।
দেশের নদীগুলো নিয়ে বাংলা বা ইংরেজিতে এ ধরনের কাজ হয়নি। তাই কাজের পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিজস্ব। বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে, ইংরেজ আমলে রচিত বেশকিছু ইংরেজি গ্রন্থে নদী সম্পর্কে বিবরণ আছে। সেগুলোর তথ্যাদি পুরনো বলে সাম্প্রতিক তথ্যাদি ব্যবহার করে কাজটি করা অধিক জটিল হয়ে পড়েছিল। প্রধানত অন্যদের প্রকাশিত গবেষণার বিবরণ নিজের ভাষায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেসব গ্রন্থের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোর একটি সহায়ক রচনাপঞ্জি শেষে সংযোজিত হয়েছে। এ ধরনের কাজ বাংলা ভাষায় নতুন বলে ভৌগোলিক বিবরণের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের বিবরণ খুব কমই ধরা সম্ভব হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, ‘বাংলাদেশের নদীকোষ’ বইটি একটি খুবই তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ বই। বইটিতে বাংলাদেশের নদ-নদীর ওপর সাম্প্রতিক তথ্যাবলি দিয়ে যথাসম্ভব কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে।